Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

" ছন্দপতন " - সুফি রায়


নতুন মলজোড়াটা হাতে করে বসে আছে শফরী। গালে নোনা জলের দাগ বসে গেছে। গলা-বুক ভিজে গেছে জলে। কিন্তু চোখের জল যে আজ বাধা মানছে না কিছুতেই। যার কারণ খুঁজতে গিয়ে শফরী তোলপাড় করে ফেলছে তার চার বছর আগেকার জীবন।

    আসলে আজ তার জীবন থেকে চঞ্চল চলে গেল। চঞ্চল তার বন্ধু মাত্র। কিন্তু....। আসলে সেই কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকেই চঞ্চল ওকে ভালবাসে। শুধু ভালবাসে বললে অনেক কম বলা হয়। শফরীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সবকিছুই ছিল চঞ্চলের ভালবাসা। কিন্তু শফরীকে সেটা জানিয়েই চরম ভুল করেছিল ও। তারপর থেকে এতগুলো বছর চঞ্চলকে এড়িয়েই চলছিল শফরী। এরমধ্যে সোহম এসেছে তার জীবনে। দুবছরের প্রেম পরিণতি পেতে চলেছে এবার। কিন্তু ঠিক তার আগেই জীবনের ছন্দটা একটু অচেনা সুরে বাজল।

    গতকাল বিকেলে হঠাৎ একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন--
   -কি রে.. চিনতে পারছিস?
   -চঞ্চল তুই? কেন চিনব না?
    শফরী সত্যিই চিনেছিল। কেন চিনবে না সে? যতই হোক, খুব ভাল বন্ধু ছিল তারা।
   -বিয়ে করছিস যে জানালি না তো..?
   -আরে সেরকম কিছু নয়। আসলে তোর নম্বর ছিল না তো। তুই কোথায় পেলি আমার নম্বর?
   -মোহনের থেকে। যাই হোক,কাল একবার মিট করতে পারবি? তোর বিয়ের গিফ্টটা নিবি না? আমি তো আর তোর মত কিপটে নই।
    দুজনেই হেসে গড়িয়ে পড়েছিল।
   -এখনো আগের মতই আছিস দেখছি। ওকে.. তবে কাল বিকেলে  কলেজ 

স্ট্রীট মোড়,ওখান থেকে কফি হাউস। আবার আগের মতই।

আজ পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে গেল শফরীর। রাস্তার ওপার থেকে তাকে দেখতে পেয়ে সাত দেখিয়ে সেখানেই দাঁড়াতে বলল চঞ্চল। ও আসছে এপাড়ে। আ..আ..! হঠাৎ তীক্ষ্ন হর্ন বাজিয়ে ক্যাঁচ শব্দ করে থেমে গেল গাড়িটা। মুহূর্তে সব অন্ধকার হয়ে গেল শফরীর।

    তারপর থেকে সবকিছু কেমন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে ঘটে চলল। শফরী স্তব্ধ হয়ে গেছিল চঞ্চলের মৃত্যুর খবরটা শুনে। কানদুটো যেন ঝাঁ ঝাঁ করছে। একটু আগেই তো ছেলেটা দৌড়ে আসছিল তার সঙ্গে দেখা করতে,কথা বলতে। তবে?

   -মিস গাঙ্গুলি..?
    নার্সের ডাকে হুঁশ ফিরল শফরীর।
   -হ্যাঁ বলুন।
   -পেশেন্টের এই জিনিসগুলো..
    মনটা মোচড় দিয়ে উঠল। ওর বিয়ের উপহার নিয়ে এসেছিল ছেলেটা। শফরী ওকে ভালবাসা দিতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু এতবছর পরে এক নতুন জীবন শুরু করার আগে সে কোন তিক্ততা রাখতে চায়নি সম্পর্কে। তাই দেখা করতে আপত্তি করেনি। কিন্তু এ কি হল..? কাঁপা হাতে প্যাকেটটা নিল শফরী। তাতে একটা মাঝারি মাপের বাক্স। রঙীন কাগজের মোড়কে তার নাম লেখা। চোখটা একটু ঝাপসা হয়ে আসল তার। বাক্সটা খুলে দেখে তাতে একজোড়া মল। শফরী পায়ে মল পড়তে খুব ভালবাসে। এখনো। সব সময় পড়ে থাকে। মলের সঙ্গে একটা চিরকুট ও রয়েছে। তাতে লেখা- "তোর নতুন জীবনের প্রথম পদক্ষেপ হবে আমার ছন্দে বাঁধা। তোর প্রতিটা শফরী-চঞ্চল পদক্ষেপে বাজবে আমার জীবনের সুর-ছন্দ।"

মুহূর্তে শফরীর বুকটা ভিজে গেল চোখের জলে। শফরীর নতুন জীবন ঠিকই, কিন্তু ও কিছুতেই নিজের মনকে বোঝাতে পারল না কেমন করে ওর এই নতুন জীবনেরই ছন্দপতন ঘটে গেল।

                                                                                                 © সুফি রায়








Post a Comment

0 Comments

Close Menu