দেবীর আবির্ভাবকুণাল রায়
অসুররাজ শুম্ভ ও নিশুম্ভের দ্বারা প্রেরিত ধূমড়োলোচন বধ হওয়ার পশ্চাতে, চন্ড ও মুন্ড অসুরভ্রাতা সমরে দেবী চন্ডীর মুখোমুখি হয়। এই রূপ আচরণে দেবী অতীব ক্রুদ্ধ হলেন। ক্রোধে দেবীর গৌরবর্ণ রূপান্তরিত হয়ে এক তীব্র কালো আভায়। দেবীর ললাট প্রদেশ থেকে উৎপন্ন হন চতুর্ভূজা দেবী চামুন্ডা। অস্থি ও চর্মে আবৃত দেবীর এই মূর্তি অতীব ভয়ঙ্কর রূপে বিবেচিত হয় পৌরাণিক কাহিনীতে। অসুরেরা এই রূপ দর্শনের পর নানা দিকে পালাতে থাকে। অন্যদিকে দেবী চন্ডী দেবী কালিকার উদ্দেশ্যে বললেন, "এই যুদ্ধ কেবল তুমিই করতে পার"। রণক্ষেত্রে আবির্ভূতা দেবী কালিকা তাঁর তান্ডব লীলা আরম্ভ করলেন। চন্ড ও মুন্ড দেবীর সম্মুখে অবতীর্ণ হলে, দেবী প্রথমে তাদের সাবধান করলেন। কিন্তু দেবীর এই বার্তায় কর্ণপাত না করায়, সূচিত হয় এক ঘোর সংগ্রাম। দেবী হুঙ্কারে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ হয়। দেবী এই নিখিল ব্রহ্মান্ডের সকল শক্তি একত্রিত করে, হুং শব্দ উচ্চারিত করে, চন্ড ও মুন্ডের শিরচ্ছেদ করলেন। দেবী চন্ডীর সম্মুখে ওই দুই অসুরভ্রাতার শির নিয়ে উপস্থিত হলে, দেবী তাঁকে চামুন্ডা নামে অভিষিক্ত করলেন।
এই দেবী চন্ডী হচ্ছেন দেবী কালিকা। পরবর্তী সময়ে দেবী চন্ডীর সাথে অসুরাজ রক্তবীজের ঘোর সংগ্রাম যখন আরম্ভ হয়ে এবং দেবতাদের বিষণ্ণ বদন দর্শন করে, দেবী কালিকা তাঁর জিহ্বা সহস্র যোজন বিস্তার করতে নির্দেশ দেন, যাতে রক্ত বীজের এক বিন্দু রক্তও যেন ভূমিতে না পড়ে। দেবী কালিকা তাঁর রক্তিম জিহ্বা বিস্তার করলেন, রক্তবীজ রক্তশূন্য হলে, দেবী চন্ডিকা তাকে শূলে বিদ্ধ করলেন। এবং কালিকা তার শিরচ্ছেদ করে, রক্তপান করতে থাকেন। দেবী হয়ে ওঠেন রক্তপিপাসু। সমর ক্ষেত্রে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দেবীর বিধ্বংসী নৃত্যে, সৃষ্টি বোধকরি রসাতলে পতিত হয়। কোন বিকল্প না দেখে দেবতারা সকলে মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন। আশুতোষ তাঁদের আস্বস্ত করলেন। দেবীর মার্গে এক বিরল অন্তরায় সৃষ্টি করলেন। শায়িত হন সমর ভূমিতে। জ্ঞানশূন্য মহামায়ার পুনরায় জ্ঞান ফেরাতে তাঁর এই অন্তিম পদক্ষেপ। দেবী শিববক্ষে আপন ডান চরণ রাখলেন। লজ্জায় আপন রক্তিম জিহ্বায়ে কামড় বসালেন। দেবী হলেন প্রশান্ত। ফিরে এলেন আপন মূল পার্বতী রূপে। ক্ষমা চাইলেন। পুনরায় মিলন সম্ভব হল হরপার্বতীর। কৈলাশ উল্লসিত। ত্রিভুবন আনন্দে মুখরিত। সৃষ্টি প্রাপ্ত করল আপন তাল, সুর ও ছন্দ!
আজ কার্তিক মাসের পুণ্য অমাবস্যায়ে ঘরে ঘরে দেবী কালিকার উপাসনা চলছে। দেবী আমাদের ঘরের মেয়ে। আপন দুহিতা। প্রশান্ত। ভক্তবৎসলা। সকল অশুভ শক্তি নাশিনী। তবে শুধুমাত্র বাহ্যিক আড়ম্বরে নয়, চেতনায় আনতে হবে সেই অনন্ত শক্তিকে যিনি সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের এক এবং অন্তিম কারণ!!
শুভ কালীপূজা
0 Comments