সন্দেশে প্রকাশিত সুকুমারবাবুর কবিতা-নাটকগুলি সত্যিই 'সন্দেশ'-কে অন্য মাত্রা দিয়েছে। সুকুমারবাবুর ২০/২১ বছর বয়সের লেখা 'ভাবুক সভা' সন্দেশে প্রকাশিত হয়। ১৯২২ সালে সুকুমারবাবুর আদেশে লীলাদেবীর (মজুমদার) প্রথম লেখা সন্দেশে আত্মপ্রকাশ করে। তখন লীলাদেবী নিতান্তই ছোট, মাত্র ১৪ বছর বয়স। তাঁর লেখার নামকরণ ছিল 'লক্ষ্মীছাড়া'। সুকুমার রায় সেটিকে 'লক্ষীছেলে' নামে সন্দেশে মুদ্রিত করেন।
১৯১৫-১৯২৩ মোটামুটি এই আট বছর সুকুমার রায় 'সন্দেশ' দায়িত্ব নিয়ে সামলেছেন। তিনি কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে দেহ রাখলেন মাত্র ৩৬ বছর বয়সে। সত্যজিৎ তখন মাত্র ২ বছরের। ১৯২৩ সালে সুকুমারবাবুর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায় সন্দেশ। কয়েক বছর পর সুকুমারবাবুর মেজ ভাই সুবিনয়ের সম্পাদনায় বছর তিনেক সন্দেশ চলেছিল। ১৯৩১ সালে থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬১ সালে অর্থাৎ ঠিক ৩০ বছর পর প্রশংসিত হয়। তাঁর নির্মিত 'গণশত্রু' সিনেমা এককথায় বলতে গেলে সমাজে ঘটে যাওয়া নানাবিধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র আঘাত এনেছেন। দর্শকের চিনে নিতে অসুবিধা হয় না সৌমিত্রবাবুর ভেতরের প্রকৃত মানুষটিকে।
সত্যজিৎবাবুর নির্মিত সিনেমার প্রসঙ্গ উঠলে যেমন অবধারিতভাবে তাঁর তৈরি প্রথম সিনেমা 'পথের পাঁচালি' এসে পড়ে, ঠিক তেমনভাবেই তাঁর নির্মিত সিনেমা আলোচনায় চারুলতাকে দূরে রাখা যায় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নষ্টনীড়কে অবলম্বন করে চারুলতার সৃষ্টি। এই ছবি যথার্থই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছে। চারুর নিঃসঙ্গতা আবার তার ভেতর দিয়েই বিকশিত হয়েছে বাস্তববাদ বা মানবতাবাদ। সবকিছুর মধ্যে এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
মানিকবাবুর শেষ ছবি 'আগন্তুক'-এ ধরা আছে তাঁর জীবনের মূল্যবোধ, নীতি, ধর্ম, সামাজিক চর্চা এবং সর্বোপরি তাঁর ভালোলাগা, খারাপলাগা। বিশ্ব পর্যটক এক মহান ব্যক্তিত্বের মুখ দিয়ে তিনি দর্শকদের শুনিয়েছেন তাঁর জীবনের দর্শন। সহজ কথায় বলতে গেলে তাঁর জীবনদর্শনের একটি অতীব সহজ দিক একাধিকবার উন্মোচিত হয়েছে, সেটা ইচ্ছে পুরানো নয় নতুনকে অবলম্বন করে বাঁচা। বড় আপনার এই মানুষটি চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন এক ভোরের বাতাস যা মনপ্রাণকে স্নিগ্ধ করে, ভালোলাগার আমেজকে দীর্ঘস্থায়ী করে বৈকি।
১৯৫২ সালেই মানিকবাবুর ভারতরত্ন ও লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য অস্কার পাওয়া। সব কিছু ফেলে রেখে এপ্রিল মাসেই তিনি সবাইকে বোকা বানিয়ে চলে গেলেন। আশাবাদী মানুষটা আমাদের ফেলে না-ফেরার দেশে চলে গেলেও দিয়ে গেছেন যে অনেককিছুই। তাঁর মুখ দিয়েই ধ্বনিত হয়েছে "দেখ রে নয়ন মেলে জগতের কি বাহার" অথবা "আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে" - বেঁচে থাকার এর চেয়ে বড় রসদ আর কি বা হতে পারে ?
তাই মুক্তকন্ঠে আজ নতমস্তকে স্বীকার করি "মহারাজা তোমাকে সেলাম"।
*******। সমাপ্ত ।*******
~ ড. সঞ্জীব রায়
2 Comments
KHUB VALO
ReplyDeleteOnek ojana tothyo jante parlam , lekhokke dhonyobad
ReplyDelete