বিশ্ব জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আজকাল বিভিন্ন ধরনের দিবস পালনের হুজুগ খুব চোখে পড়ে। এই যেমন ধরা যাক, 'বিশ্ব সাস্থ্য দিবস' কিংবা 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' এইরকম আরো কত। সেইসব বিশেষ দিনগুলি পালনে একদল মানুষ খুব উৎসাহী। তবে পালন বলতে তো ওই ফেসবুকে বা ওয়াটস্অ্যাপে কিছু শুভেচ্ছা বিনিময়, কিছু ছবি পোস্ট, এর বেশী আর কিছুই না। এমনকি মজার বিষয় হল - এইসব দিনগুলির উৎস কোথা থেকে, এর তাৎপর্যই বা কি সেটুকু জানারও অবকাশ নেই কারো।
এই কিছুদিন আগেই ২১শে জুন চলে গেল 'বিশ্ব সঙ্গীত দিবস'। কৌতুহলী মন তবু খোঁজ করে পেল কিছু নতুন তথ্য। আমরা সকলেই জানি, সঙ্গীত হল এমনই এক সুমধুর সুরের মূর্ছনা যা উজ্জীবিত করে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে। সে সুর ধ্বনিত হোক কারো কন্ঠে অথবা বাদ্যযন্ত্রে। তার প্রভাব পড়ে মানুষের মনে, এমনকি অন্য যে কোনো প্রাণী,এমনকি উদ্ভিদ কুলের ওপরেও। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সঙ্গীতের এই প্রভাব বহুবার বহু ভাবে পরীক্ষিত হয়েছে এবং গবেষকরা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে সঙ্গীতের প্রভাব সমগ্র জীব কুলের ওপরেই বিদ্যমান। সেই হিসেবে দেখতে গেলে মিউজিক থেরাপি বর্তমানে চিকিৎসা শাস্ত্রের অন্যতম একটি জনপ্রিয় শাখা। দেশ, কাল, পাত্র ভেদে সঙ্গীত বৈচিত্র্যময়, তা সে যেমনই হোক - সুরের প্রভাবে, ছন্দের প্রভাবে আন্দোলিত হয় প্রায় সকলেই।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে যে বিভিন্ন ধরনের রাগ রাগিনীর প্রয়োগ দেখি, তার প্রভাবও স্বীকার করে নিয়েছেন দেশ-বিদেশের সকল সঙ্গীতপ্রেমীরা।
বিশ্ব সঙ্গীত দিবস প্রথম পালন করা হয় প্যারিসে ১৯৮২ সালে। ফ্রান্সের বিখ্যাত সুরকার মরিস ফ্লিউরেটের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কলা ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রী জ্যাক ল্যান্জ এই উৎসবের প্রথম শুভ সূচনা করেন। তারপর থেকে প্রতি বছর ২১শে জুন এই দিনটি বিশ্ব সঙ্গীত দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এর পেছনে যে উদ্দেশ্যটি কাজ করেছিল, তা হল- মানুষ জনকে পথে এক এক জায়গায় জড়ো করে সঙ্গীত পরিবেশন ও শ্রবণের আনন্দ উপভোগ করার ব্যবস্থা করা। সেই থেকে বিশ্বের প্রায় ১২০ টি দেশ ২১শে জুন তারিখটি কে 'বিশ্ব সঙ্গীত দিবস' হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে। মানুষের মনে সঙ্গীত চেতনা বোধ টিকে আরো বেশী করে উদ্বুদ্ধ করতেই এই দিনটির গুরুত্ব। মূলত সঙ্গীত শিল্পীরা তাদের বাদ্যযন্ত্র সহকারে এই দিনটি তে নিজেদের আনন্দেই সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকেন রাস্তাঘাটে, পার্কে, স্টেডিয়ামে, এমনকি থিয়েটার গুলিতেও। শুধুমাত্র সঙ্গীতের আনন্দ টুকু উপভোগ করাই থাকে এর পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য। পাশাপাশি উদীয়মান বা প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশন সকলের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার এক সুন্দর ও অভিনব প্রচেষ্টা।
তাই কোনো একটি দিন নয়, প্রতিটি দিনেই মানুষের জীবনে সঙ্গীত তার নিজস্ব জায়গা করে নিক। মানুষের জীবনে সুখ, দুঃখ প্রতিটি পরিস্থিতিতে সঙ্গীত চিরকালই বন্ধুর মতো পাশে থেকে এসেছে। সকলের জীবন সঙ্গীতময় হোক। সুরের স্পর্শে মুছে যাক সব বেদনা, ক্লান্তি আর হতাশা। কবির ভাষায় তাই বারে বারে বলতে ইচ্ছে করে- "সুরে সুরে সুর মিলিয়ে আনন্দগান ধর না।"
0 Comments