মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্ম গ্রহণ করেন ২৫ শে জানুয়ারি ১৮২৪ সালে। তাঁর ছন্দ নাম ছিল টিমোথি পেনপোয়েম। উনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন। কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও পরে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্ৰথম বাংলার ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন।এই অমিত্রাক্ষর ছন্দে তিনি 'মেঘনাদ বধ' কাব্যটি লেখেন। তিনি দেশের বাইরের গেছেন কিন্তু জীবনের শেষ বয়সে তিনি জঙ্গল ও পাহাড়ের ঘেরা মালভূমি পুরুলিয়া জেলাতে ছিলেন। তিনি দুবার পুরুলিয়া আসেন ১৮৭২ সালে জর্জকোটে এক মামলা সংক্রান্ত কাজে, সেই কাশিপুরের রাজবাড়ির রাজা নীলমোহন সিং দেও এর সাথে তাঁর পরিচয় হয়, তার সাথে কাশিপুর রাজবাড়িতে গিয়েছিলেন। এর কিছু মাস পর আবার পুরুলিয়া আসেন এবং কাশিপুর রাজবাড়ির রাজসভায় সভাকবি থাকতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি ৬ মাস পুরুলিয়া তে ছিলেন। নীল মোহন সিং দেও তাঁর ম্যানেজার হিসেবে থাকেন। এই সময় পুরুলিয়া তে থেকে তিনি এই মানভূম জেলার সম্পর্কে একটা কবিতা লিখেন। কবিতাটা হলো এই রকম -
পাষাণময় যে দেশ, সে দেশে পড়িলে,
বীজ কুল-শস্য এথায় কখন কি ফলে ?
কিন্তু কত মহানন্দ তুমি মোরে দিলে,
হে পুরুল্যে! দেখাইয়ালে কত ভকত মণ্ডলে,
শ্ৰী ভ্রষ্ট সরস সম, হায় তুমি দিলে,
অজ্ঞান তিমিরাছন্ন এ দূর জঙ্গলে,
এতে রাশি রাশি পদ্ম ফোটে তব জলে।
তাঁর এই কবিতা দেখে কাশিপুরের রাজা খুবই খুশি হয়ে তাকে সভাকবি হিসাবে নিযুক্ত করেন। তার লেখা কবিতা থেকে এই মানভূম জেলার নাম হয় পুরুলিয়া।
পুরুলিয়া জেলার রূপ তাঁর কবিতাতে ফুটে উঠেছে। তাঁর নামে কাশিপুরে একটি মহা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান হয়। ৬ মাস পুরুলিয়াতে থাকার পর কবি কলকাতাতে চলে যান। তাঁর বিদায় বেলায় কবি বলেছিলেন - যদি সুস্থ থাকি এই জেলাতে যেন থাকি। কিন্তু কলিকাতায় যাবার কিছু দিনের মধ্যেই কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও মারা যান ১৯৭৩ সালে জুন মাসে।
কবি যে অবদান রেখে গেছে তার জন্য পুরুলিয়া মানুষ তাকে মনে রেখেছে।
~ অনাদি মুখার্জি
© Copyright Protected
0 Comments