ছেলেরা থাকে বাইরে।
মায়ার টানে জীবন শেষ হলো।
ভালোবাসা কাকে বলে রে?
ছেলেরা যখন ছোটো ছিল,
আয় ছিল না মোটে।
হাওলাত করে চাল এনে,
রান্না হত ঘরে।
একবার রেঁধে তিন বার খাইয়েছি,
বুড়ো-বুড়ি করেছি উপোস।
আজ ও নাতি-পুতি বেড়াতে এলে,
ভালো রান্না বাড়ী হয় ঘরে।
বুড়ি নিজের খাবারের অর্ধেক,
নাতি-পুতিকে দিয়ে, নিজে থাকে অর্ধাহারে।
মায়ার টানে জীবন শেষ হয়।
ভালোবাসা কাকে বলে রে?
দুজনেরই হাইপ্রেসার, সুগারের রুগী,
ডাক্তার বলেছে চিন্তা করবে না।
মিষ্টি বাদে আর সব খাবে ঠিক ঠিকই।
ছেলে কিংবা নাতির বিষফোঁড়া হলে।
বৌমা বলে ঘামাচি হয়েছে।
জ্বর কিংবা কাশী হলে,
বৌমা বলে ঠাণ্ডা গরম লেগেছে।
বুড়ো - বুড়ি ভাবে এ তো সত্য কথা নয়।
এ হলো প্রেসার কন্ট্রোল রাখার টনিক।
মায়ার টানে জীবন শেষ হল।
ভালোবাসা কাকে বলে রে?
নাতি-নাতনি সন্ধ্যায় লেট করে ফিরলে ঘরে,
বুড়ি দরজায় ঘন ঘন তাকায়।
নিজে পারেনা চলতে।
দরজায় নাতি-পুঁতির জুতো চটি থাকলে,
বুড়ির পেসার ঠিক থাকে।
শান্তি আসে মনে।
মায়ার টানে জীবন শেষ হল।
ভালোবাসা কাকে বলে রে?
নাতি-পুঁতি জেদ ধরলে,
দুষ্টুমি করলে বৌমা পিটায়,
দরজা বন্ধ করে।
পাশের ঘরে বুড়ো অস্থির হয়ে যায়।
তেড়ে যায় বৌমার দিকে।
বৌমা বোঝেনা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি যন্ত্রণা
তাই রাগ করে মিছে।
আসলে চেয়ে সুদের কদর বেশি।
দুই বুড়ো-বুড়ির কাছে।
মায়ার টানে জীবন শেষ হল।
ভালো বাসা কাকে বলে রে?
লক ডাউনে দুই ছেলে বাড়ি।
কাজ কর্ম নেই, মানসিকতা অস্থির।
নেই, নেই রবে সংসারে অশান্তি বাড়ে।
বলির পাঁঠা হয় বুড়ো বুড়ি।
বৌমারা রেগে নাতি পুঁতিকে দেয় না আসতে কাছে।
বুড়ি কাদে ঘরের কোণে বসে,
গোপনে চোখের জল মোছে আঁচলে।
মায়ার টানে জীবন শেষ হয়!
ভালোবাসা কাকে বলে রে?
বৃদ্ধভাতা তুলতে গিয়ে ব্যাংকে,
বুড়ো বুড়ি আক্রান্ত হলো করোনাতে।
তার সারা সে সরে পড়লো,
আমি রইলাম ঘাটের মরা হয়ে।
বৌমরা বলে বেড়ায় পড়শিদের কাছে।
শাশুড়ী আমাদের সংসারটা আগলে রেখেছিল,
মায়ার বাঁধনে।
দাত থাকতে দাঁতের যত্ন বুঝলো না কেউ।
সব চলছে ঠিকঠাক।
রাতে যখন ঘুমাতে যায়
মশারী টানায় খাটে।
বুড়ির কথা মনে পড়ে,
বালিশ ভাসে দু চোখের জলে।
মায়ার টানে জীবন শেষ হয়!
ভালোবাসা কাকে বলে রে?
~ সুজিত বালা
© Copyright Protected
0 Comments