Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

বিদ্যাসাগর ও বালিকা বধূ | কলমে ~ সুতপা অধিকারী সেন | নীরব আলো

সালটা ১৯৬০এর পর। মেয়েটা ১৩ বছরে শ্বশুরবাড়ি এলো। ১৭ বছরের বিবাহিত ননদ, থাকে কলকাতা। মাঝে সাঝে বাপের ঘরে আসে। দুজনের সখ্যতার বুনট খুব সুন্দর।

            হঠাৎ পরিবারটার মাথায় বাজ পড়লো। আঠারো বছরের মেয়ে বিধবা নাম নিয়ে ফিরে এলো বাপের ঘরে। ১৩ বছরের মেয়ে, ননদের শুকনো মুখ দেখে তার ভিতরটা ফেটে যায়। কি করে এই অবস্থার বদল হবে ভাবতে থাকে। কিছু একটা তো করতেই হবে।দেওরদের সাথে তাদেরই বই নিয়ে পড়তে বসে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী পরে একটা আলো দেখতে পেলো সে। ঐ মহান মানুষের কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাপের বাড়ি এসে শুরু হয় মায়ের সাথে আলাপ আলোচনা। মা অভয় দিলেন, "আমি আছি তোর সাথে। কিন্তু এমন ছেলে কোথায় পাই?"

            দশম শ্রেণিতে পরীক্ষা। ফর্ম ফিলাপ করতে আসা হলো সদরের স্কুলে। ছেলেটা সবে চাকুরীতে ঢুকেছে। একবুক সাহস আর ঝকঝকে দুটো চোখ। ক'দিন পরেই দোল। ফর্ম ফিলাপের শেষে কথা নেই বার্তা নেই একমুঠো আবীর এনে যুবকটি ঢেলে দিলো এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার মাথায়।

"এ কি করলেন?" আঁতকে উঠলো দুই সখী, ননদ-বৌদি।

-- এ কি করলেন? আমার ননদ বিধবা।

দুজনের কান্না দেখে একটুও বিচলিত না হয়ে তলোয়ারে ধার দেওয়া গলায় যুবকটি উত্তর দিলো, "ভয় কী? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পথে আমি হাঁটতে চাই। অসুবিধা আছে কিছু?"

            তারপর অনেক ঘাতপ্রতিঘাত সহ্য করে মেয়েটি তার মা বাবার সাহায্য নিয়ে ননদকে নতুন জীবনে প্রতিষ্ঠিত করলো। শাস্তি হলো তার, পুরো একটা বছর শ্বশুর বাড়ির সাথে যোগাযোগ বন্ধ। বাপের বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে। মেয়েটা শুধু ভাবে, তোমার নামে তো ঈশ্বর আছে। তাঁর নির্দেশে আমি যে কাজ করেছি তার ফল এতটা খারাপ হতে পারে না।একদিন সবাই বুঝবে আমি ভুল করিনি।

            অপেক্ষা আর ধৈর্যের পরীক্ষায় পাশ করে সে। ননদ আর শাশুড়িমার সাথে চিঠিতে যোগাযোগ ছিলো। এক চিঠিতে শাশুড়িমা জানালেন, "খুব শীঘ্রই তোমার শ্বশুর যাবেন তোমাকে আনতে। তোমার মা বাবাকে আমার নমস্কার দিও।

ইতি-

        তোমার শাশুড়িমা।


দুহাত জড়োকরে মেয়েটা প্রণাম করে বিদ্যাসাগরের উদ্দেশ্যে। তোমার দেখানো দুটো পথ। স্ত্রী শিক্ষা, বিধবা বিবাহ। আমি দুটোই পেরেছি। তুমি আমার ঠাকুর। শুধু তোমার জীবনী পরে কি হয়! তোমার দেখানো পথে হাঁটবো, তবে না দেশের সার্থকতা।

মেয়েটা আর কেউ নয়, আমার পরম পূজনীয়া মা।

এমন ভাবে এক মহাপুরুষকে শ্রদ্ধা জানাতে পারে ক'জন?

     সুতপা অধিকারী সেন 
© Copyright Protected

Post a Comment

0 Comments

Close Menu