"...ও রাগ হয়েছে বুঝি,খাবি না তো.." বলে বিস্কুট গুলো মুখের সামনে ধরলেও, অনীহা দেখে অবাক হলো সিধু। একবার শুঁকে সরে গেল তারই মতো রাস্তায় আশ্রয় নিতে নেমে আসা ভুলো।
"সে কি রে এত অভিমান, সেই তো ফিরে আসতে হলো" -হেসে উঠলো বাচ্চা ছেলেটা। সবাই বলে কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি প্রখর কিন্তু তাবলে কুকুরের কিনা অভিমান! অন্যদিন ওর সামনে বিস্কুটের প্যাকেট খোলার সময় পর্যন্ত দেয় না, আনন্দে লেজ নেড়ে ঝাঁপিয়ে অস্থির করে তোলে, কিন্তু আজ খুব যেন মন মরা। চোখের কোলদুটো একটু ভেজা দেখে জড়িয়ে ধরলো সিধু, তারপর ঠিক যেন মানুষের মতো বলতে লাগলো, "হলো তো, শখ মিটলো তোর, আমি তো জানতাম এমনই হবে তোর সঙ্গে, মানুষ খুব বেইমান রে," বলে কান দুটো ধরে ভুলোর গায়ে নিজেকে এলিয়ে দিলো।
বছর দুয়েক হলো সিধু মায়ের সাথে উঠে এসেছে রাস্তার ধারে ওই খোলা অপরিত্যক্ত বারান্দায়। যাকে বাবা বলে ডাকতো একদিন বড্ড মদ গিলে মাকে মেরে ফেলার উপক্রম!সেদিন মা ও ব্যাটার ঘাড় ধাক্কা জুটেছিল। রাস্তার পুঁচকে নাদুস নুদুস কুকুর ছানা গুলোই প্রাণ হয়ে ওঠে সিধুর। সবাইকে নামও দিতো। সে বার ছয়টা বাচ্চার মধ্যে দুটো ধাক্কায় অঘোরে প্রাণ হারালো। দুটো চুরি হলেও ছিল এই ভুলো আর কাজলি।বেশ কিছুদিন হলো ভুলো আসতো না, কোথায় যায় দেখে সন্দেহ হতেই পিছু নিয়ে দেখলো এক বিরাট বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকলো ভুলো।" ও আচ্ছা, বেশ বেশ তুইও তাবলে এরকম রে! ভালো খাবার পাচ্ছিস তাই আসিস কম, ছেড়ে চলে গেছিস"- এসব কথা ভেবে উদাস হয়ে ফিরছিল সিধু। আজ ভুলো খাচ্ছে না দেখে চিন্তা করতেই সিধুর নজরে পরে ওই বাড়ির ছেলেটা বিদেশি কুকুর কিনে চেন বেঁধে ঘোরাচ্ছে। এবার যা ভেবেছিলাম তাই হলো বাইরের দামি অতিথিকে পেয়ে ভুলোর জন্য গেট বন্ধ। ভুলোকে জড়িয়ে আদর করে সিধু অভয় দিয়ে বললো, "যাক গে যাক, গেট বন্ধ করে তোকে এড়িয়ে গেলো তো গেলো। আমি থাকতে কোত্থাও যেতে হবে না তোকে।" অবিকল মানুষের মতো নিজের এড়িয়ে যাওয়া দোষ হয়েছে বুঝতে পেরে সিধুর পায়ের কাছে গড়াগড়ি খেতে লাগলো, যেন একটা ভুল সারমেয় টাকেও প্রচুর শিক্ষা দিয়ে গেলো।
~ রাণা চ্যাটার্জী
© Copyright Protected
1 Comments
ধন্যবাদ জানাই উদ্যোক্তাদের।
ReplyDelete