সেরা সেদিন স্কুল যাবার পথে দেখল, একটা বাচ্চা ছেলে ওষুধের দোকান টার আশে পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ঢুকছেও না, আর ওষুধও কিনছে না। কি ব্যাপার, ও এরকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ও বলল, ওর মায়ের খুব জ্বর, কিন্তু ও পয়সা না থাকায় ওষুধ কিনতে পারছে না। শুনে সেরার চোখে জল এসে গেল। কাল পিসিমণি এসে ওকে যে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে গেল, সেটা তো ওর এই মুহূর্তে কোন কাজে লাগবে না! তাই ওটা ও ওকে দিয়ে দিল।
স্কুলে ঢোকার ঠিক আগে দেখল, একজন হাড় জিরজিরে ভিক্ষুক মাটিতে বসে একটা পাত্র নিয়ে কাঁদছে আর বলছে, "তিন দিন কিছু খেতে পাই নি, কিছু খেতে দেবে মা?"
সেরা তখন ভাবল, ওর টিফিন বক্সের খাবার টা ওকে দিয়ে দিলে কেমন হয়? কিন্তু টিফিনে তাহলে ও কি খাবে? ওরও তো খিদে পাবে, হ্যাঁ, পাবে, কিন্তু স্কুল ছুটির পর ও তো আবার বাড়ি গিয়ে খেতে পাবে। আর এই ভিখিরি টা তো তিন দিন ধরে কিছুই খায়নি। এই ভেবে ও ওর টিফিন বক্সের সব খাবার খাতা থেকে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে ঢেলে নিল ও ভিক্ষুকের হাতে দিল।
এরপর ফেরার সময় ও দেখল, ওরই মত একটি মেয়ে গায়ের জামাটা শতচ্ছিন্ন, জরাজীর্ণ, হাজার টা তালি মারা। দেখে চমকে উঠল সে। ওর মনে পড়ে গেল, বাড়ি তে তো ওর এমন কত জামা রয়েছে, যা ও পরেই না।অথচ জামা গুলো প্রায় নতুন। ও ঠিক করল, আজ কিছু জামা নিয়ে স্কুল ব্যাগে লুকিয়ে রাখবে, তাহলে কাল স্কুলে আসার সময় মেয়ে টিকে দিয়ে দেবে।
পরদিন ওর মাসিমণি বেড়াতে এলেন, এবং ওর জন্য একটা সুন্দর জামা, ও অনেক অনেক চকোলেট ও কেক নিয়ে এলেন। আর ওর এক কাকা বিদেশে থাকেন, ওখান থেকে সেরার জন্য প্রচুর খেলনা পাঠিয়েছেন। দুদিন পরে ও ওর মামার বাড়ি বেড়াতে গেল, দাদু-দিদা ওর হাতে হাজার টাকা দিল, ও ওর পছন্দ মত কিছু জিনিস কিনে নেওয়ার জন্য।
রাতে ও স্বপ্ন দেখল, একটা সুন্দর পরী ওর সাথে খেলছে, গল্প করছে, খুব মজা করছে। দুজনে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। যাবার সময় পরী তাকে বলল, " তুমি ভিখারী কে নিজের খাবার টুকু দিয়েছ, তাই তুমি অনেক চকোলেট ও কেক পেলে, এবং সাথে অনেক খেলনা। গরিব মেয়ে টাকে জামা দিয়েছ, তাই সুন্দর জামা পেলে। আর টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে সাহায্য করেছ বলে হাজার টাকা পেলে। ভালো কাজ করলে তার সবসময় ভালো ই হয়, আর খারাপ কাজ করলে খারাপ। আশীর্বাদ করি, তুমি যেন সারা জীবন এরকম ই ভালো, সুন্দর ও পবিত্র থাকো।"
~ অন্তরা ঘোষ কর্মকার
© Copyright Protected
0 Comments