রাখি বন্ধন এক পবিত্র উৎসব, এক সংহতিমূলক অনুষ্ঠান এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, স্নেহ ও মমতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
এই বন্ধন যে শুধুমাত্র ভাই- বোনেদের মধ্যে আবদ্ধ তা নয়, ব্যাপকতর অর্থে বিস্তৃতি লাভ করেছে। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান-জৈন সকলের মধ্যে এই অনুষ্ঠান পালিত হয় এক মানবিক মূল্যবোধে। ভারতবর্ষে এই রাখি বন্ধন পালিত হয় এক সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন হিসেবে।
রাখি বন্ধনের উৎস খুঁজতে গেলে আমাদেরকে সেই পৌরাণিক যুগে যেতে হবে। যখন কোন এক যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের হাতে আঘাত লেগে রক্ত বের হয়, তখন পঞ্চপাণ্ডবের পত্নী দ্রৌপদী তার শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেয়। শ্রীকৃষ্ণও প্রতি কর্তব্যস্বরূপ দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় তাঁকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচায়।
রাখি বন্ধন উৎসবের যে ঐতিহাসিক মত আছে তাতে বলা হয়, একবার চীতোরের বিধবা রানী কর্ণবতীর রাজ্য আক্রমণের সময় তিনি মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সাহায্য চেয়ে রাখি পাঠান। এছাড়াও আমরা শুনেছি সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে রাখি বন্ধন উৎসবের প্রচলন ছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ব্রিটিশ ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে লর্ড কার্জন যখন বাংলাকে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ করেন এবং হিন্দু-মুসলিম ভাই বোনেদের ডাক দেন ঐক্যবদ্ধ হতে। সে সময় প্রত্যেকে প্রত্যেকের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন ও ভারতবর্ষের সংহতি রক্ষা করেছিলেন।
আজ রাখি বন্ধন উৎসব শুধুমাত্র ভাই-বোনেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এর মানে আজ ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। রাখি বন্ধন উৎসব মূলত সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন, স্নেহের বন্ধন, মমতার বন্ধন সর্বোপরি মানবতার বন্ধন।
0 Comments