চলেছি মেলার পথে, যে দিকে দেখছি শুধুই লোক জনের ভিড়....।
তার মধ্যেই মেলার ভিড়ে যে যার মতো
জিনিস কিনছে, জিনিস বেচছে।
নিজেরা যে যার মতোই ...
বেশ কিছু ছেলে মেয়েরা দল বেঁধে যাচ্ছে, হাসি গল্পে মেতেছে তাদের আসর।
ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েদের পুতুল, খেলনা, বেলুন কেনার ঝোঁক।
কেউ কেউ ঠেলা দিয়েছে নানা খাবারের।
মেলার ভিড়ে চোখে পড়ে চারিদিকে অল্প বয়সি মেয়েদের সাজে আধুনিকতার ছোঁয়া।
আধুনিকতার মাত্রাও অনেকে ছাড়িয়েছে দেখলে অবাক হই।মেলায় ঘুরতে ঘুরতে একটা ঠেলার সামনে দাঁড়ালাম মোম খাবো বলে। জ্যোতি প্লেটে সাজিয়ে মোম গুলো খুব যত্নে আমাদের হাতে তুলে দিল। মেলার মাঝে আমি যেন তাকে একটু অন্য ভাবেই দেখলাম।
জ্যোতি তার বয়স বেশি নয় উনিশ কিংবা কুড়ি বর্তমানের অতিআধুনিকতার যুগে জ্যোতি একটু আলাদা সে যেন আধুনিকতা থেকে মুক্ত। যদিও এর আগেও ওর বাবার সাথে অনেক জায়গায় ওকে দেখেছি। তবুও আজ একটু অন্য রকম লাগলো।
কী সুন্দর রুচিবোধ তার পোশাকে, একটি হালকা গোলাপি চুড়িদার গায়ে তার উড়না।
দেখতেও খারাপ নয় ফরসা গায়ের রং মুখশ্রীটিও বেশ পড়াশুনোতেও ভালো কিন্তু সে তার বাবার ঠেলার সাথে বাবাকে সাহায্য করছে চাউমিন, মোমো, এগরোল, ফুচকা, ঘুগনি, পাঁপড় সবই প্লেটে সাজিয়ে দিচ্ছে লোকেদের। হিসেব করে টাকাও নিচ্ছে সবার কাছ থেকে। কেউ জল চাইলে জলও দিচ্ছে জ্যোতি। জ্যোতি তার নামের মতোই উজ্জ্বল।
তার ব্যবহার, আচরন, বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বাবাকে সাহায্য করার মানসিকতা জ্যোতি কে তার বয়সি অন্যান্য মেয়েদের থেকে অনেক ...অনেক আলাদা করে দেয়। যেখানে তারই মতো মেয়েরা আধুনিকতার নামে স্বাধীনতার নামে সুন্দর বন্ধুদের তথা বয়ফ্রেন্ড্ এর হাত ধরে মেলায় বা পার্কে সময় কাটাচ্ছে অর্থের জন্য নিজেরা হচ্ছে সহজলভ্য। রূপ চর্চায়, সোশালমিডিয়ায় নানা কার্যকলাপে ব্যস্ত সেই সময় জ্যোতি তার বাবার হাত শক্ত করে ধরেছে ...জানে সংসারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধের আসল অর্থ। জ্যোতি রা আছে বলে আজও কোন কোন সংসার আলোকিত হচ্ছে। বাবা মা দের সম্বল হচ্ছে, সাহস হচ্ছে। এখনও ভবিষ্যতে কিছু সংসার সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে এই জ্যোতিদের হাত ধরে। এখনও সমাজের সব মেয়েরা আধুনিকতার আতিশয্যে ভেসে যায় নি। এখনও কিছু জন রয়েছে যারা মা বাবার সংস্কার, মান, সম্মান ও রুচিবোধের পরিচয় কে বহন করে নিয়ে চলেছে। সমাজের জ্যোতিদের মতো মেয়েরা আজও আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা ও সম্ভ্রমের সাথে মাথা উঁচু করে নিজেদের জীবন সুন্দর গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে ........ নিজেদের অন্তরের আলোয়, অন্তরের শিক্ষায় এরা আলোকিত এরাই জ্যোতি।
0 Comments