চিঠির প্রথমে আমার বিজয়ার প্রণাম নিও।
কেমন আছো জানতে চাইবো না। জানি ওখানে শান্তিতেই আছো। আজ তোমাকে কত গুলো কথা বলতে চাই। তুমিই তো বলতে,"দেখবি, এমন একটা দিন আসবে সবাই তোকে অবাক হয়ে দেখবে। ইয়া একটা লম্বা গাড়ি আমার ভাঙা ঘরটার সামনে দাঁড়াবে। আশেপাশের লোকজন চোখ কপালে তুলে তোকে শুধু দেখবে।" কই,তেমন তো কেউ দেখেনা আমায়। সত্যি বলছি কেউ দেখেনা। আমার কোনো লম্বা ইয়া বড় গাড়ি কেনা হয়নি গো। হয়তো সেই অভিশাপ,হ্যাঁ মনে পড়ে তুমিই বলেছিলে আমি যখন তোমার অবাধ্য হয়েছিলাম তখন, "তুই কোনোদিনও সুখী হবিনা।" তোমার আশির্বাদ আমার লাগলো না কোনো কাজে কিন্তু তোমার অভিশাপটা কি রকম লেগে গেলো দেখো। জানো, তুমি যাদের নাম করে বলতে ওমুক মেয়েটা কাঁখে একটা, হাতে একটা বাচ্চা নিয়ে তোকে এসে বলবে, "কি দিদি তুই কেমন আছিস?এই দেখ আমার বাচ্চারা, ও ট্যাঁপা আর ও বুঁচি। তুই তখন ঠোঁটের ফাঁকে হাসি এনে ব্যাগ থেকে দুটো বাচ্চার হাতে টাকা দিয়ে বলবি ভালো করে মিষ্টি খাওয়াস ওদের।" জানো,ওর বরের লম্বা একটা গাড়ি। একটাই বাচ্চা। ছুটিতে কত জায়গায় বেড়ায়,কত ছবি পাঠায় ফেসবুকে, হোয়াটস অ্যাপে আমাকে। তুমি তখন অমন কেন বলতে গো? আমি নাকি বিদেশ যাবো আমার বরের সাথে, তুমি সব সময় বলতে। অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় আমি ঘুরবো। জানো, একবার ডায়মন্ড হারবার গেলেই আমাকে মাসের টাকার হিসেব করতে হয়,গুনে গুনে খরচ করতে হয় তখন। একদিক বাদ দিয়ে আর একদিকের খরচ সামলাই। তুমি আরো বলতে, "তুমি আমার বাড়ি আসবে; আমার রাঁধুনি, চাকর-বাকর তোমায় নানান কিছু রান্না করে বসিয়ে যত্ন করে খাওয়াবে আর আমি তাদের বসে বসে হুকুম করবো।" জানো,আমার ঘরের রান্না বান্না,কাজ কম্ম সব আমিই করি। আমার একটা ঠিকে ঝিও নেই। তুমি আমায় আমার গোটা জীবনে শুধু আশির্বাদই করে গেছো। কিন্তু জীবনে একবারই অভিশাপ দিয়েছিলে। সেটাই ফলে চলেছে জীবন জুড়ে। তোমাদের অপছন্দ হয়েছিল আমার অবাধ্যতা,তবুও কেন দিলে সেই অভিশাপ? জিতে গেলে তো? আর আমি জেতার ভান করে চরম ভাবে হেরে বসে আছি জানো..? খাওয়া দাওয়ার কোনো অভাব হয়না আমার। সে সব ঠিক ঠাকই আছে। তোমার বাড়িতেও যেমন কষ্টে চলেছি আজও তেমন না হলেও স্বচ্ছলতা নেই আমার জীবনে। তবে সাধ আমার একটু একটু করে মরতে মরতে একেবারে মৃত। আমার গয়নার সাধ হলে আমাকে বলা হয়, "তুমি আর পাঁচজনের মত সাধারণ গয়না পরা নারী নয়। গয়না দিয়ে কী করবে?" এক একটা মানুষের তিনটে করে হাত। ডান বাম আর অজুহাত। আমার সাধ মরে এই ভাবেই।বেড়ানোর সাধ জাগলে যদি বলি বেড়াতে যাবো তবে শুনতে হয়,"লোকের কথায় নেচোনা। বেড়িয়ে কী হবে?" শরীরের অসুস্থতায় কাজের লোক রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে শুনতে হয়, "লোককে দেখে অমনি কাজের লোক রাখার ইচ্ছা জাগলো?নিজের কাজ নিজে করা ভালো। এতে শরীর সুস্থ থাকবে। আর আমাদের এতো উদ্বৃত্ত নেই যে কাজের লোকে টাকা ঢালবো।" এতকিছুর পরও লোকে জানতে যখন চায় আমি কেমন আছি। হেসে বলি "আমি ভালো আছি।"
ইতি--আমি সেই মৃতপ্রায় কন্যা
- সঙ্ঘমিত্রা প্রামাণিক চ্যাটার্জ্জী
0 Comments