Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

" সমীরণ " - প্রথম খন্ড | তিতির দত্তগুপ্ত



                   ভালবাসার অর্থ কি? শুধুই কি ভালবাসা নাকি ভাল মনের ভালো বাসা? নাকি নিজেকে হারিয়ে অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকা? সময় বলুক।

        গল্পের শুরু বাঁকুড়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সদ্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নতুন নতুন কিশলয় এবং তাদের  নতুন করে জীবন শুরুর এক পর্যায়। সহজ, মীশমি, রণিত, নবমী চারটি চিরসবুজ ছেলেমেয়ে কাউন্সিলিংয়ে গিয়ে  আলাপ। ৮-৯ ঘন্টা একসাথে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা হতে হতে প্রাথমিক বন্ধুত্ব হয়েই যায়। সহজ, মীশমি কম্পিউটার সায়েন্স  আর রণিত, নবমীর ইলেকট্রনিক্স। মীশমি কলেজ হোস্টেলে থাকে। আর বাকীরা পেয়িং গেস্ট। তাহলেও  কলেজে একসাথে যাওয়া-আসা, উইকএণ্ডে ঘুরতে যাওয়া, প্রজেক্টের কাজে একে অপরকে সাহায্য করা, সব কাজ তারা মিলেমিশে করে। এদের সুদৃঢ় বন্ধুত্ব দেখে গোটা কলেজ তাদের একটা নামও দিয়েছে "সমীরণ"। নতুন কলেজ, ফার্স্ট ইয়ার, সিনিয়র দাদা-দিদিদের আলাপ করার নামে ছোটখাটো ইন্টারোগেশন্ লেগেই আছে। ফ্রেশার্স ওয়েলকামও হয়ে গেছে। এরা চারজনই শিল্পকলায় পারদর্শী। বিভিন্ন জায়গা থেকে শো পায়, নিজেদের হাতখরচটা উঠে আসে। কলেজের  ক্লাসটেস্ট, সেমিস্টার, রাত জেগে পড়া আবার সকালে উঠে পরীক্ষা দিতে যাওয়া— সব ভালোই চলছিল।

ফার্স্ট সেমিস্টার শেষ, একটু শান্তি। একসাথে সবাই  কলেজ থেকে ফিরছে। হঠাৎই সহজ বলে, "এই জানিস, তোদের একটা খবর দেওয়া হয়নি। আমরা একটা বড় শো পেয়েছি, তবে রাতের  অনুষ্ঠান। বেশ ভালো রেমুনারেশন দেবে বলেছে।" শুনে রণিত বলে, "দেখিস, সাথে দুটো মেয়ে আছে। কোনোরকম অসুবিধা যাতে না হয়।"
"আমরা তোদের সাথে সাথেই থাকব, নো চাপস্"- নবমী উত্তরে বলে। এত কথা হচ্ছে কিন্তু মীশমি একদম চুপচাপ। নবমী মীশমির কাঁধে হাত রেখে বলে, "কি রে তোর কি হয়েছে? তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? চুপচাপ কেন?"
— না তা নয়, এমনি কথা বলতে ভালো লাগছে না।
— বলছি নবমী, তুই আজ আমার সাথে  থাকবি?
নবমী হেসে বলে, "উমমমমম্ ঠিক হ্যাঁ  দোস্ত, থাকুম তর লগে।"
সহজ, রণিত  দুজন ঠিক করে, অনুষ্ঠান কিভাবে সাজাবে সেটার একটা আলোচনা করে নেবে। তাই সহজের গেস্ট হাউসে রয়ে যাবে। মীশমিও নবমীকে নিয়ে  হস্টেলে চলে আসে। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে  টিফিন করে নিয়ে বসে আছে। নবমী গল্প করেই যাচ্ছে, মীশমি  শুনছে। মাঝে মাঝে হাসছে আবার উত্তরও দিচ্ছে, কিন্তু সেই প্রাণবন্ত  ভাবটা  নেই। কিছুটা টেনশনে আছে বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎই নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে মীশমি বলে, "নবমী, আমি তোকে খুব ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে চলে যাবি না তো।"
— আমিও তোকে ভালোবাসি। তাছাড়া  আমরা  চারবন্ধুই একে অপরকে খুব ভালোবাসি, এটা নতুন কি আছে? তাছাড়া হঠাৎ এইরকম কথা....
মীশমি একদৃষ্টে  তাকিয়ে থাকে। হঠাৎই নবমীকে জড়িয়ে ধরে, ঠোঁটে প্যাশনেটলি চুমু খায়। এটার জন্য নবমী প্রস্তুত ছিল না। একঝটকায় মীশমিকে নিজের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। চিৎকার করে বলে ওঠে, "এটা  কি অসভ্যতামি!!! কি এসব??" ভয় পেয়ে মীশমিও সরে আসে। "তুই বিশ্বাস কর, আমি তোকে এতটাই ভালোবাসি, তোকে না দেখতে পেলে মনে হয় আমার চারপাশ  যেন কেমন ফাঁকা ফাঁকা। তোকে কারোর সাথে একটু বেশী কথা বলতে দেখলে আমি সহ্য করতে পারি না। তুই শুধু আমার। এই অনুভূতি গুলোর শুরু তোকে যখন কাউন্সিলিংয়ের দিন প্রথম দেখি সেদিন থেকে, কিন্তু লজ্জায় বলতে পারি নি। কেন যে আমার এইরকম হয়!!" মীশমি কাঁদতে কাঁদতে বলে।
নবমী মীশমিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, "ঠিক আছে, আমাকে একটু  ভাবার সময় দে, আমি তোকে সব জানাব। তুই একটু  ঘুমানোর  চেষ্টা  কর, আমি তোর মাথায়  হাত বুলিয়ে  দিচ্ছি।" মীশমি ঘুমিয়ে পড়ার পর নবমী রুমের বাইরে গিয়ে সহজকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু সহজ বা রণিত কেউই এই ব্যাপারে কিছু সমাধান দিতে পারে না। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাবেনা। পরের দিন সকালে মীশমি ঘুম ভেঙ্গে চোখ খুলে দেখে নবমী  হাতের ওপর মাথা রেখে শুয়ে ওর মাথায় চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে, "কি সোনামণি, ঘুম হয়েছে?" নবমী জিজ্ঞাসা করে। মীশমি ঘুমচোখে বলে, "উমমমমম হয়েছে।"
"ভালোবাসা টেবিলে রাখা একটা শূন্য পাত্র। তুমি  যেভাবে তাকে ভরতে চাইবে, সে সেই ভাবেই ভরবে" হাসতে হাসতে বলে  নবমী। মীশমি তড়াক করে বিছানা থেকে উঠে আনন্দে নবমীকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে.... এইভাবে মান অভিমানের পালা চলার পর নবমী  বলে, "শুধু ভালোবাসলে হবে? দুদিন পর অনুষ্ঠান, প্রিপারেশনটা কে করবে শুনি!!"
——————————

বেশ জোর কদমে চলছে ওদের প্রস্তুতি। অনুষ্ঠানের দিন আসন্ন। এতবড় অনুষ্ঠান, কিছু প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বও সেখানে আমন্ত্রিত। প্রত্যেকেই  তাদের মা বাবাদের আমন্ত্রণ করেছে।

        অনুষ্ঠানের দিন সকালে সবাই কাছের একটা মন্দিরে পুজো দিতে গেল। বেলা ৩টে থেকে প্রোগ্রাম। উদ্যোক্তারা গাড়ি পাঠিয়ে দেবে সহজ-এর গেস্ট হাউসে,  ওখানে থেকে ওরা মীশমি আর নবমীকে তুলে নেবে। মীশমি, নবমী এখন একইসাথে থাকে। ফলে ওরা ওদের অনুভূতি গুলো একে অপরের সাথে শেয়ার করতে পারে। তার সাথে প্রচুর আদর, শাসন চলতে থাকে। তারা নিজেদের মধ্যে একটা কল্পিত স্বপ্নের  জাল বুনে চলে। ওরা ঠিক করে পড়াশোনা শেষ করে চাকরী নিয়ে বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো করে থাকবে।
যথাসময়ে গাড়ি এসে ওদের পিকআপ করে নিয়েছে। ওরা গাড়িতেই একবার রিহার্সাল দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ওরা  দুটো গান সিলেক্ট করেছে (আমাদের গান তানিয়া from Madly Bangali আর K.K এর একটা গান, ইয়ারো দোস্তি), এর সাথে মীশমির কণ্টে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'উলঙ্গ রাজা' আবৃত্তি আর নবমীর সহযোগী নৃত্য। খোলা আকাশের নিচে সুন্দর মঞ্চ, চারিদিকে লোকারণ্য তাদের অনেকটাই অক্সিজেন দিল।

        ওদের বেশ ভালো লাগছে, ঝাঁ চকচকে গ্রীনরুমে ওরা বসে আছে। মনের মধ্যে চাপা টেনশন ও আছে। উদ্যোক্তারা জানিয়ে যান, যেসব প্রথিতযশা শিল্পীদের আসার কথা ছিল তাঁরা এসে গেছেন। ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, মালবিকা বসু, অঞ্জন দত্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "আমি সাধারণ মেয়ে" আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন। এবার ওদের পালা। সহজের গিটারের এক মনোমুগ্ধকর মূর্চ্ছনায় প্রথমেই ওদের গ্রুপ পারফরমেন্স "ইয়ারো দোস্তি" গোটা অডিটোরিয়ামকে গলা মেলাতে বাধ্য করল। এরপর মীশমির গলায় "উলঙ্গ রাজা" শুনে অভিভূত হয়ে  বিশেষ অতিথির আসন থেকে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্টেজে এসে অনেক আশীর্বাদ করলেন। অতিথি আসনে যেখানে স্বয়ং অঞ্জন দত্ত বসে আছেন, সেখানে "আমাদের গান তানিয়া" আমরা একা কেন গাইব, অঞ্জন দত্তকে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দিল রণিত। একটা বেশ সরগরম ব্যাপার। মীশমি আর নবমীর পারফরমেন্স শেষ, ওরা ড্রেস চেঞ্জ করতে রুমে চলে গেল। 
"উফফফ!!!! অ্যাটলিস্ট পারফরমেন্সটা ভালো করে উতরে গেছে, এবার খুব ক্লান্ত লাগছে রে...." বলেই নবমী ধপাস করে বসে পড়ল সোফায়। মীশমি দাঁড়িয়ে দেখছে নবমীর রকমসকম। তারপর বোদ্ধার মতো বলল, "হুমমম... কিন্তু তোকে এখন যা লাগছে না.....।"  নবমী  তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, "এই তুই এখন বাইরে যা, আমি চেঞ্জটা করে নিই।"
— আররেরর... কেন আমার সামনেই কর না, সমস্যা কোথায়? আমি আর তুই কি আলাদা?
মীশমী হাসছে আর বলছে.... "সবসময় শুধু দুষ্টুমি, তাই না!! যা না বাবুই, লক্ষ্মী আমার। এখুনি মা-বাবা, ভাই দেখা করতে চলে আসবে" বলে নবমীকে একপ্রকার ঠেলেই রুম থেকে বের করে দিলো।

ওদিকে অনুষ্ঠান শেষ, সবাই খুব খুশি হয়েছে। উদ্যোক্তারাও খুব আনন্দিত হয়েছেন এবং রফা হওয়া টাকার থেকে একটু বেশিই ওদের খুশি হয়ে দিয়ে দিল। 
নবমী, মীশমি নিজেদের রুমে বসে আছে, নিজেদের মধ্যে গল্প করছে।
— কাল তো ভ্যালেন্টাইনস ডে, আমাদের সম্পর্কের প্রথম ভালবাসা দিবস। আমরা সারাদিনটা খুব আনন্দ করবো। তোর কি উপহার লাগবে বল, নবমী বলল।
— আমার কিছুই লাগবে না। তুইই তো আমার সবচেয়ে পছন্দের উপহার। এর থেকে ভাল উপহার আর হতেই পারে না।

পরের দিন সকালে নবমী ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি স্নান করে রেডি হয়ে নেয়। রুমের জানলার পর্দা সরিয়ে দিতেই সকালের প্রথম রবি কিরণ মীশমির মুখে পড়ে তাকে আরো মোহময়ী করে তুলেছে। মনে হচ্ছে পরম মমতার চাদরে যেন জড়িয়ে আছে।

"ওই বাবুই ওঠ ওঠ"..... নবমী ডাকছে। " শুভ ভালোবাসা দিবস মীশমি, অনেক অনেক আদর। (একটু আদর করার পর)চল তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাব,তাড়াতাড়ি রেডি হ।
অবাক হয়ে মীশমি বলে, "এই সক্কাল সক্কাল কোথায় যাব?"
— চল-ই না।

শহর থেকে অনতিদূরে গ্রীন গার্ডেন পার্ক। চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। যদিও এটা একটা ম্যানমেড পার্ক, তবুও প্রকৃতি যেন তার রূপলাবণ্যে সেজে উঠেছে। সুন্দর নয়নাভিরাম পরিবেশ। নবমী আগে নেটে সার্চ করে দেখে রেখেছিল আর সাথে সাথে একটা গাড়ি বুক করে রেখেছিল। 
গাড়ি করে ওরা রওনা দিল, পথে অনেকবারই মীশমি জানতে চেয়েছে তারা কোথায় যাচ্ছে। নবমী বারবার একই কথা বলেছে, "এত অধৈর্য কেন? একটু সারপ্রাইজ থাক না!!"

পার্কের  কাছাকাছি আসতেই নবমী,  মীশমির চোখটা বেঁধে দেয়।
"আরে করছিসটা কী? জিজ্ঞাসা করে মীশমি। নবমী মীশমির হাত ধরে পার্কের মধ্যে নিয়ে গিয়ে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, "একটু অপেক্ষা কর, আসছি।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে মীশমির চোখটা খুলে দিয়ে বলে, "দেখ তো তোর সারপ্রাইজটা পছন্দ হয় কিনা।"
মীশমি চোখ খুলে দেখে, ওর সামনে একটা টেবিলের উপর রাখা আছে এক তোড়া লাল-হলুদ গোলাপ, এক ঝুড়ি ক্যাডবেরি-চকলেট, আর একটা বড় টেডি, তাতে লেখা আছে "For My Valentine,  With Love,  Nabami"। মীশমি তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে নবমীকে জড়িয়ে ধরল, "I LOVE YOU TOO..।"

        হাসতে হাসতে গল্প করতে করতে ওদের অনেকটা সময় কেটে গেছে। হঠাৎই বিকট একটা শব্দে পার্কটা কেঁপে উঠল। চারদিকে শুধু কালো ধোঁয়া, মানুষের ত্রাহি ত্রাহি রব। ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। নবমী এইরকম আকস্মিক ঘটনায় হতচকিত হয়ে গেছে। "মীশমি... মীশমি..." বলে চিৎকার করছে, কিন্তু কোন উত্তর আসছে না।
কিছুক্ষণ পরে ধোঁয়াটে ভাবটা একটু পরিষ্কার হতে, চারদিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মীশমিকে কোথাও দেখতে পেল না। নবমী এবার ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে কিছু মুখে কালো কাপড়ে ঢাকা বন্দুকধারী হঠাৎই পার্কে ঢুকে পড়ে বোমাবাজি করে। একটা ২২-২৩ বছরের মেয়েকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। পার্কের অথরিটির লোকেরা বাধা দিতে গেলে তাদের কয়েকজনকে বন্দুকের আঘাতে জখম করে পালিয়ে গেছে। নবমী মেয়েটার বিবরণ দিতেই তারা বলল, "হ্যাঁ হ্যাঁ... এইরকমই পোষাকে ছিল।" নবমী এবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে, কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। ততক্ষণে খবর পেয়ে লোকাল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করার চেষ্টা করছে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে। নবমী পুলিশের কাছে গিয়ে মীশমির পুরো বিষয়টি জানালে একটা মিসিং ডায়েরি করার পরামর্শ দেন থানার আইসি। সহজ আর রণিত দুজনের কেউই বাঁকুড়াতে ছিল না। ওরা কিছুদিনের জন্য শান্তিনিকেতন গেছিল সহজের মাসতুতো দাদার বাড়ি। নবমীর কান্না ফোনের ওপার থেকেও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। কিছু গড়বড় হয়েছে এটা আন্দাজ করে নিয়ে দাদা বললেন, "কী হয়েছে রে পাপুন? (সহজের ডাক নাম)কিছু সমস্যা?" সহজ তখনি সব ব্যাপারটা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে। শুনে তো মাথায় হাত দাদার। কিছু একটা চিন্তা করে বললেন, "আমি যেটা ভাবছি সেটাই যদি হয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদেরকে অপারেশনে নামতে হবে। তার আগে থানার আইসির সাথে কথা বলতে হবে। তোরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাঁকুড়া থানায় পৌঁছা,  আমি একটা ফোন করে আসছি।"

সহজ, রণিত থানায় পৌঁছতেই নবমী ওদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সে বারবার একটাই কথা বলতে থাকে, "আমার জন্যই সবটা হয়েছে, আমার আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।" ওরা সান্ত্বনা দিয়ে বলে, "তোর তো এতে কোন দোষ নেই। এটা একটা আনএক্সপেক্টেড অ্যাক্সিডেন্ট। ভয় পাসনা সব ঠিক হয়ে যাবে,  আমরা থাকতে মীশমির কিছু হবে না।"
এদিকে নবমী এই পুরো ঘটনাটার জন্য নিজেকে দায়ী করে অনুশোচনার আগুনে পুড়তে লাগলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, যে সে থাকতে মিশমীর কোনরকম ক্ষতি হতে দেবে না। ইতিমধ্যেই একজন নিজের ইউনিফর্মে থানায় এসে ঢুকলেন, আইসির সাথে কেসটার ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বললেন। সহজ, রনিত ও নবমী দাদার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। সহজ দাদাকে ফোন করতে যাবে, তখনই পেছন থেকে পাপুন বলে কেউ যেন ডাকল। ফিরতেই দেখে কাবুল দা ওরফে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের হেড অফ দি ডিপার্টমেন্ট সঙ্কর্ষণ রায়। ওরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি এই পোষাকে?"
— তোদের তো বলাই হয়নি। আমি মাস দুয়েক হল এখানে জয়েন করেছি।  ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দেব কিন্তু সেটা করার আর সময় হলো না। যাই হোক, কাজের কথায় আসি। মিশমীর কাছে যে একটি মোবাইল ফোন ছিল সেটার মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্রেস করা যায় কিনা সেটা দেখার জন্য বলে দিয়েছি। সমস্ত পুলিশ স্টেশনে মিশমীর ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু খবর পেলেই তোদের জানাব। চিন্তা করিস না।
কাবুল দার কথায় সেদিন তিনজন ফিরে এসেছিল। কিন্তু মিশমীর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে যত দিন এগোচ্ছে নবমী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। এর মধ্যেই হঠাৎ একদিন নবমীর নাম্বারে একটি ফোন আসে। কিন্তু নবমী মানসিকভাবে এতটাই বির্পযস্ত যে কোনো ফোনকলই রিসিভ করেনা। দুবার তিনবার একইভাবে বেজে যাওয়ার পর নবমী কলটা রিসিভ করল। আর সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠল।

                                                                   
                                                                  তিতির দত্তগুপ্ত ©



                                                       =>>  দ্বিতীয় খন্ড 

Post a Comment

0 Comments

Close Menu