Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

" সমীরণ " - দ্বিতীয় খন্ড | তিতির দত্তগুপ্ত


               "হ্যালো নবমী!!" এই কণ্ঠস্বর শুনে আনন্দে উত্তেজিত হয়ে নবমী বলল, "বাবুই তুই কেমন আছিস? কোথায় আছিস? ঠিক আছিস তো? ভয় পাস না, মনে জোর রাখ..." নবমীকে কথা শেষ করতে না দিয়ে মিশমী ফিসফিস করে শুধু বলল "পুরনো শিব মন্দির", বলেই ফোনটা কেটে দিল।
তখনই তিন বন্ধু মিলে কাবুল দার কাছে গিয়ে সবটা বলে। খোঁজ শুরু হয় পুরনো শিবমন্দিরের। গ্রীন গার্ডেন পার্ক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে একটা ভাঙাচোরা মন্দিরের সন্ধান পাওয়া যায়। মন্দিরের চারপাশে কালো মুখোশধারীদের অতন্দ্র প্রহরা। সেই ঘেরাটোপ সামলে ঢুকতে গেলে একটু সাবধানতার প্রয়োজন, আর প্রয়োজন একটা পরিকল্পনার।

ঠিক হয় কীর্তনীয়ার ছদ্মবেশে মিশমীকে উদ্ধার করতে যাবে পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে এবং পুরনো শিব মন্দির সন্ধান করতে করতে হঠাৎ একদিন তারা কাবুলদার কথামত সমস্ত পুলিশ দিয়ে পুরো মন্দির ঘিরে ফেলা হল। তারা জয় রাধেশ্যাম,  জয় রাধেশ্যাম বলতে বলতে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে একটি চেয়ারের সাথে মিশমীকে বেঁধে রাখা হয়েছেl প্রিপারেশন অনুযায়ী ওরা ক্রমাগত নামগান করতে থাকবে, আর সেই সুযোগে নবমী মীশমিকে উদ্ধার করবে। কিন্তু বিধি বাম, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মিশমীকে দেখে নবমী নিজের আবেগকে আর সংযত করতে পারল নাl সে ছুটে গিয়ে বাঁচাতে গেল কিন্তু সহজ ও রনিত নবমীকে বাধা দিল। এতে  অপহরণকারীরা বুঝে গিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করল। নবমী নিজের জীবনকে বিপন্ন করে মিশমীর হাতে পায়ের বাঁধন খুলে মিশমীকে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আই এম সরি, আই এম রেস্পন্সিবল ফর দ্যাট।" ভেতর থেকে অনবরত গোলাগুলির আওয়াজ শুনে পুলিশ ততক্ষণে  মন্দিরে ঢুকে পড়েছে। অন্যদিকে অপহরণকারীদের একজন নবমীকে গুলি করতে গেলে তা সহজের চোখে পড়ে যায়। সহজ নবমীকে ঠেলে সরাতে গেলে,গুলিটা সহজের হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। অপহরণকারীদের সকলকে পুলিশ গ্রেফতার করে ও মীশমীকে উদ্ধার করা হয়। এই কদিনে মিশমী যে মানসিক শক পেয়েছে সেটা দূর করার জন্য তাকে কাবুলদার বাড়িতে রাখা হয়। সহজের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সংবাদপত্র টিভি চ্যানেলের দৌলতে কোনো কিছুই আর অপ্রকাশিত রইল না। ওদের জীবনে এতবড় একটা ঘটনা, তাও আবার পুলিশী হস্তক্ষেপ— মীশমীর পরিবারে নবমী আর ওর সম্পর্ক ঘিরে একটা সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। এটা আরো স্পষ্ট হয়ে যায় নবমীর মীশমিকে দেওয়া কিছু চিঠি, আর কিছু কার্ড দেখে। যাতে এই সম্পর্কের পরিধির আর ব্যাপ্তি না হয়, মীশমীকে ভয় দেখিয়ে নবমীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য মীশমীকে কড়া  পাহারায় বাড়িতে আটকে রাখে এবং সব যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। কলেজ যাওয়ার সুযোগ পেলেও তাও কড়া পাহারার মধ্যে। শুধুমাত্র সহজের ফোনে ভিডিও কলিং ছাড়া মীশমি নবমীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। দুজনেই খুব কষ্টে আছে। মনের মাঝে ওদের একসাথে কাটানো স্মৃতিগুলো শরতের মেঘের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে— কোনোটাতে বৃষ্টি তো কোনটাতে মিষ্টি রোদ্দুর। একদিন নবমী বুদ্ধি করে একটা চিরকুট লিখে সহজকে দিল মীশমির কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। চিরকুটে লেখা ছিল "কাল ৩.১৫ এর  Digital Electronics এর লেকচার অফ থাকবে, ওই সময় কলেজের পিছনের গার্ডেনে দেখা করব। তুই পিছনের দরজা দিয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে আসবি আমি ওখানেই তোর জন্য অপেক্ষা করবো, সহজ, রণিত তোর বর্ডিগার্ড গুলোকে দেখে নেবে।" মিশমী যথা সময়ে কলেজ গার্ডেনে পৌঁছলো। কলেজের গার্ডেনের চারিদিকে ফুলের বাগান, আর লাল গোলাপ বাগিচা। গার্ডেনে গিয়ে নবমীকে দেখতে না পেয়ে মীশমি নাম ধরে ডাকলো, তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল। হঠাৎ পিছন থেকে মিশমীর চোখ দুটো কেউ হাত দিয়ে চেপে ধরল। নবমীর স্পর্শ  মিশমীর কাছে অজানা নয়। তখনই মিশমী ঘুরে নবমীকে জড়িয়ে ধরল। "অনেকদিন পর আজ একটু শান্তি পেলাম। এতদিন শুধু শরীরটাই ছিল কিন্তু প্রাণটা তোর কাছে ছিল। সেটা আজ ফিরে এসেছে। বেশ কিছুক্ষণ নিজেদের জমানো অনুভূতি গুলো আদরের চাদরে ঢেকে নিল। কিনতু এইভাবে তো বেশি দিন তো চলতে পারে না। সামনেই ক্যাম্পাসিং, ফাইনাল প্রজেক্ট। তারপরই তো সব শেষ। এদিকে সহজ, রণিত সময় শেষের সিগন্যাল দিচ্ছে। মীশমী নবমীকে আশ্বাস দিল, "সব হবে। তবে আমাদের এখন একটাই কাজ,  ক্যাম্পাসিংয়ে যেকোনো প্রকারে একটা চাকরি পাওয়া ।

——————————

মীশমি আর নবমী দুজনেই এখন হায়দ্রাবাদের এক নামকরা মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানিতে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কর্মরতা। যদিও অনেক কসরতের পর কাবুলদার এক বন্ধুর সহযোগিতায় হায়দ্রাবাদে পোস্টিং নিয়েছে নবমী। সহজ এবং রণিত দুজনেই হায়ার   স্টাডিজের জন্য হায়দ্রাবাদে, সাথে একটা কোম্পানির হয়ে প্রজেক্টের কাজও করছে। মীশমি কোম্পানি থেকে সুসজ্জিত ফ্ল্যাট পেয়েছে, ওখানেই ওরা তৈরী করে নিয়েছে নিজেদের ভালোবাসার সুখী গৃহকোণ। নবমীর ফ্যামিলি থেকে কোন প্রবলেম নেই, ওনারা সম্পর্কটা বেশ মেনেই নিয়েছেন। কিন্তু মীশমির ফ্যামিলি এখনও মেনে নিতে পারেনি। শতসহস্র বাধা দেওয়া সত্বেও মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছেন তারা। দৈনিক রোজনামচা, অফিস থেকে ফিরে গৃহস্থালীর টুকটাক কাজ, অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট, সপ্তাহান্তে কাছে পিঠে ঘুরতে যাওয়া, শপিং, মুভি বেশ ভালোই চলছে। 

এইরকমই একদিন ওরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। বেশ ফুরফুরে মেজাজে গল্প করতে করতে যাচ্ছে। গাড়ির স্টিয়ারিং নবমীর হাতে। হঠাৎই চোখে একটা তীব্র আলো আর সঙ্গে প্রচণ্ড ঝাকুনি। হতচকিত হয়ে শেষ মুহূর্তে কন্ট্রোল করতে গিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি নবমী। গাড়িটা গিয়ে ধাক্কা মারল একটা ল্যাম্পপোষ্টে। তারপরই সব অন্ধকার। মীশমীর আর কিছু মনে নেই।

অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়ে সহজ, রণিত তড়িঘড়ি হসপিটালে পৌঁছোয়। দুজনেরই  সিরিয়াস অবস্থা, তবে নবমীর অবস্থা আরো বেশী ক্রিটিকাল। নবমীকে ICU তে রাখা হয়েছে। 
দুজন গেল ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। মীশমীকে মেডিসিন, ব্লাড দেওয়া হচ্ছে। মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সব চলছে। তবে এখনও জ্ঞান ফেরেনি। দুটো ছোট অপারেশন করতে হতে পারে। সেগুলো সময় মত জানাবো। যেহেতু জ্ঞান ফেরেনি এখনো তাই ৪৮ ঘন্টা না কাটলে কিছু বলা যাচ্ছেনা। 
"আর নবমী?" জিজ্ঞাসা করল রণিত।
— আমাদের হাতে আর কিছু নেই, আপনারা ওর সাথে দেখা করে নিন।
কিছুটা উত্তেজিত হয়েই বলল রণিত, "আপনাদের হাতে কিছু নেই মানে কী? কি করতে হবে বলুন, সমস্ত ব্যবস্থা করে দেবো। কিন্তু নবমীকে যেভাবে হোক বাঁচিয়ে তুলুন।"
— Clam down my child... নবমীর ব্রেন হেমারেজ হয়ে এত ব্লিডিং হয়েছে যে সেটা আর পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। হার্ট পুরো শরীরে ব্লাড সারকুলেট করতে পারছে না।  যা ব্লাড দেওয়া হচ্ছে, সেটাও আর শরীর নিতে পারছে না, বডি সাপোর্ট করছে না। রক্তে লিপিডের পরিমান খুব বেড়ে গেছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে বলে Coronary Thrombosis। আর তাছাড়া, যে বাঁচতে চায় তাকে বাঁচানো যায়। কিনতু উনি তো কোনো ট্রিটমেন্টই নিতে চান না। যাই হোক, উনি সহজ নামে কারোর সাথে দেখা করতে চান।
ওরা দৌড়ে গেল। সহজ নবমীকে ঐ অবস্থায় দেখে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নবমী সসজকে দুখেই ওর হাতদুটো জড়িয়ে ধরল, "আমাকে ছুঁয়ে কথা দে, তুই মীশমিকে  আগলে রাখবি। ওকে কখনো জানতে দিবি না আমি আর তোদের মধ্যে নেই, আমাকে প্রমিস কর সহজ। না হলে, আমি মরেও শান্তি পাব না।"
— তোর ভালোবাসাকে আমি কি তোর মত করে আগলে রাখতে পারব? না  তোর মতো নিঃস্বার্থ ভালবাসতে পারব?
নবমী উত্তেজিত হয়ে বলে, "তুই পারবি, পারতে তোকে হবেই..." কথাটা বলেই নবমী চুপ করে যায়। তার মাথাটা কেমন নেতিয়ে পড়ে। রণিত দেখে Cardiac Monitoring  System এ হার্ট বিট ফলাকচুয়েট করছে। ওর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমছে, নবমী প্রাণপণ চাইছে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে আরো একটু বেঁচে থাকতে, আরো কিছু বলতে। কিনতু শেষ কথাটা বলতে চেয়েও আর বলা হল না। সহজ দুবার নবমী, নবমী করে ডাকলেও আর কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। রণিত চিৎকার করে ডাক্তারবাবুকে ডাকে, ডাক্তারবাবু এসে ফোর্সফুলি হার্টবিট ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত আর নবমীকে ফিরিয়ে আনা গেল না...........এক নিমেষে সব শেষ।

নবমীর মা, বাবা এই আকস্মিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন। একমাত্র মেয়েকে হারাবার কষ্ট আর সহ্য করতে পারছেন না। সহজ, রনিত যে তাদের কি বলে সান্ত্বনা দেবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
অফিসিয়াল যা যা ফরম্যালিটি ছিল,সহজ গিয়ে শেষ করল। কিন্তু এর পরেও একটা গুরুদায়িত্ব থেকে যায়। সহজ আর রনিত কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ওরা অনুমতি নিল যাতে নবমীর শেষকৃত্য  হায়দ্রাবাদেই করতে পারে, আর  মীশমি সুস্থ হলে ওকে নিয়েই ফিরবে।

শেষকৃত্য শেষ করে যখন ওরা ক্লান্ত মনোরথে বাড়ি ফিরল তখন আর একটা নতুন দিনের সূর্য কিছু নতুন বার্তা নিয়ে উদিত হয়েছে। হসপিটাল থেকে জানায় মীশমীর জ্ঞান ফিরেছে।

—————————————-

এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ পাঁচটা বছর। রনিত নিজস্ব কোম্পানি খুলেছে। বিয়ে করে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা। সহজ এখন ইন্ডিয়ান রেলওয়ের ইস্টার্ন শাখার সেকশন ইঞ্জিনিয়ার, মিশমিকে নিজের জীবনসঙ্গী  করেছে। যতটা পেরেছে মীশমিকে খুশী রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যখনই মীশমি নবমীর কথা জানতে চেয়েছে প্রত্যেকবারই এক কথাই বলেছে, ওইরকম ক্রাইসিস থেকে সুস্থ হওয়ার পর বিদেশে একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরী পেয়ে ওখানেই বিয়ে করে স্বামী সংসার নিয়ে সুখে শান্তিতে আছে। এই কথা বারবার শুনতে শুনতে মীশমিও একপ্রকার মেনেই নিয়েছে। কিন্তু মনে মনে কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি, একটু একটু করে রাগও মনের মধ্যে জমেছে।

একদিন রণিত ভিডিও কল করেছে সেই সূদুর কানাডা থেকে। অনেক বছর পর প্রিয় বন্ধুদের সাথে কথা হচ্ছে, একেবারে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেছে। কথায় কথায় নবমীর কথা উঠতেই মীশমি খুব রেগে গিয়ে বলল, "ওর কথা ছাড় তো, ওর মতো স্বার্থপর কেউ আছে? নিজের সুখের চেয়ে ওর কাছে কিছু মানে রাখে? মুখেই শুধু ভালবাসি, ভালবাসি। ভালোবাসা বজায় রাখতে গেলে নূন্যতম যোগাযোগ রাখতে হয়। ভালোবাসা!! আমার একটা খোঁজ নিয়েছে? বিয়ে করেছে তো কি হয়েছে?"
রণিত মিশমীকে বোঝানোর জন্য কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই সহজ "আমি তোকে পরে কল করছি" বলে কলটা কেটে দিল। আর ফোনটা বন্ধ করেই মীশমিকে সপাটে একটা চড়। হঠাৎ সহজের এমন ব্যবহারে মিশমী হতবাক।
— মারলি কেন? 
— কি বলছিস তুই জানিস? তোর কোনো ধারণা আছে তুই কার সম্বন্ধে কী বলছিস? এই যে সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে পাচ্ছিস.... কার জন্য? এই যে একটা সংসার পেয়েছিস..., কার জন্য? এই যে তুই একটা অন্য মীশমি হয়েছিস..... কার জন্য?
মীশমি কিছুই বুঝতে না পেরে বলল, "কি পাগলের মতো বকে যাচ্ছিস?"
— হ্যাঁ,  রে আমি পাগল!! তাই তোকে এতদিন কিছু জানাইনি।
এরপর সহজ বলতে থাকে সেই ভয়াবহ অ্যাক্সিডেন্টের কথা, যাতে মিশমীর দুটো চোখই নষ্ট হয়ে যায়। মুখমণ্ডল এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে প্লাস্টিক সার্জারি করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তোকে বাঁচানোর তো তবু অপশন ছিল। কিনতু নবমী তো আমাদের কোনো অপশনই দেয়নি। কারণ ও সেই সুযোগটাই নেয়নি। তোর ভালোবাসাকে আমরা হাজার চেষ্টা করেও সেইদিন বাঁচাতে পারিনি। কিন্তু নবমী আজএ বেঁচে আছে তোর চোখে-মুখে। নবমীর শেষ ইচ্ছা ছিল ও তোর মধ্যে দিয়ে সারাজীবন আমাদের ছুঁয়ে থাকবে। আমরা ওর শেষ ইচ্ছেটা রাখতে পেরেছি শুধু। মিশমী এতটুকু শোনার পর নিজেকে আর ঠিক রাখতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে সহজের  বুকে পড়ে গেল। জ্ঞান ফেরার পর মীশমি কাঁদতে কাঁদতে সহজকে জিজ্ঞেস করে "বলিস নি কেন?? কেন?? ....নবমী সবসময়ই কেন জিতে যাবে?"
— তোর কষ্ট হবে তাই নবমীর বারণ ছিল.......। সহজ নবমীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

ওরা হঠাতই অনুভব করে একটা বাতাস কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে। তার সাথে একটা প্রাণোচ্ছল হাসির শব্দ। বলে যাচ্ছে কিছু কথা, "না রে, আমি শুধু একা জিতিনি। জিতেছিস তুইও, আমার সবটুকু নিয়ে। জিতেছে আমাদের নিঃস্বার্থ ভালবাসা। তোর মনের মধ্যে যদি বাঁচার তাগিদ না থাকত, আমার কোনো কিছুই তোর কাজে লাগত না। তোর মধ্যে দিয়েই তো আমি বেঁচে থাকব, আর বেঁচে থাকবে আমাদের "সমীরণ".....॥

                                                                                                               
                                                                       
                                                                  তিতির দত্তগুপ্ত ©


--------|| সমাপ্ত ||--------

Post a Comment

0 Comments

Close Menu