Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

"পাপ বিদায়" (প্রথম পর্ব) ~ হর্ষময় মণ্ডল

 

মাদের পরিবারের জনসংখ্যা পাঁচ জন- বাবা, মা আর আমারা তিন বোন। বাবার নাম সুজন দাস, মায়ের নাম রতি, আমার নাম সৌরিজা, মেজ বোনের নাম শ্রেষ্ঠা ও ছোট বোনের নাম আয়ূষা। শ্রেষ্ঠা ও আয়ূষা জমজ। আমার থেকে বোনেরা এক বছরের ছোট। আমি ক্লাস দশম শ্রেণীতে পড়ি, বোনেরা নবম শ্রেণীতে পড়ে।
            আমি বয়সের তুলনায় অনেক বড়সড় ছিলাম, মানে এখনও আছি। মানে ডেভলপ ফিগার এবং খুব সুন্দরী। আমাদেরই পাড়ার একটি ছেলেকে আমার ভালো লেগে যায় ও ভালোবেসে ফেলি। আমার বাবা খুব রক্ষণশীল মনোভাবের। বাবা কোন ভাবে আমাদের ভালোবাসার ব্যাপারটা জানতে পারে। আমাকে বাবা জিজ্ঞাসা করাতে আমি কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে থাকি। বাবা ওতেই যা বোঝার বুঝে গেল, আর কারো কথা না শুনে আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই বিয়ে দিয়ে দিল, আমার পছন্দ-অপছন্দের দাম না দিয়েই। কেবল বিয়ের আগে বাবা বললো, "ছেলেটা টিভি চ্যানেলে কাজ করে, তুই তোর গানটা চালিয়ে যেতে পারবি। তাছাড়া ছেলের বাবা প্রাইভেট কোম্পানিতে ভালো পোস্টে চাকরি করে, বাড়িতে অভাব নেই।"
            বিয়ে হয়ে যাওয়ার মাসখানেক পরে আমার স্বামী অরিত্রকে বললাম, "তুমি দিনের পর দিন ঘরে বসে আছো, চাকরি থেকে কতদিনের ছুটি নিয়েছ?"
-- চাকরি! কি চাকরি? কার চাকরি?
-- কেন, তুমি টিভি চ্যানেলে চাকরি করো না?
-- কোন টিভি চ্যানেলে?
-- আমি কী করে জানবো! তুমিই তো বাবাকে বলেছো, বাবা বিয়ের আগে আমাকে বলেছে।
-- বিয়ে করতে হলে ওরকম মিথ্যে বলতে হয়, নইলে বিয়ে হয় না।
--- আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কি বলে এ !
কি সুন্দর নির্বিবাদে বলে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলাম, "তাহলে কী কাজ করো? রোজগার কিছু করো না?"
-- ঐ মাঝে মধ্যে পছন্দের কাজ পেলে করি।
-- তাহলে আমাকে খাওয়াবে কী?
-- আমি বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। বাবা ভালো চাকরি করে, বাবা খাওয়াবে।
-- এ হেন উত্তরে আমি কি বলবো! হাসবো না কাঁদবো, না কপাল চাপড়াবো না বাবাকে দোষ দেবো!
            মাস ছয়েক অতিক্রান্ত হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম আমি মা হতে চলেছি। বাড়ির সব কাজই আমাকে করতে হয়- কাটা, বাটা,  বাসন ধোয়া, ঘর মোছা, কাচা সব।  শাশুড়ি কেবল খুন্তিটি নাড়ে। আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। আমি কি করবো, আমার কি করা উচিত। শ্বশুরের রোজগারের উপর ভরসা করে বাচ্চা নেবো! ডাক্তার, ওষুধ, ডেলিভারি, তারপর বেবিফুড- কী করে এত সব খরচ চলবে? এই ছ'মাসের মধ্যে অরিত্রকে কোনো কাজ করতে দেখলাম না। নিজের হাতখরচের টাকা, সেটাও বাবার কাছ থেকে নেয়। কোন কোন দিন মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে। ছেলে যে এতো অর্কমণ্য এবং সাথে বদ নেশা, তার জন্য শাশুড়ি শ্বশুর একটা কথাও বলে না। ছেলেকে বলার সাহস নেই, উল্টে কথা শোনায় আমাকে। 
            একদিন শাশুড়ি ও শ্বশুর মশাইকে বললাম, "আপনাদের ছেলে কোনো কাজ তো করেই না, এমনকি কোন কোন দিন মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে। আপনারা কিছু বলেন না কেন?"
দু'জনেই চুপ। শ্বশুর মশাই বললেন, "আমরা বাগে আনতে পারিনি বলেই তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম দায়িত্ব পড়লে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু.....। এবার তোমার দায়িত্ব অরিত্রকে বাগে এনে কর্মঠ করে তোলা ও কুসঙ্গ ত্যাগ করানো।"
-- আমি!
শাশুড়ি বললেন, "হ্যাঁ তুমি। কি করে বাগে আনবে সেটা তোমাকেই ঠিক করতে হবে।"
            আমার শ্বশুর বাড়ির সমস্ত পরিস্থিতির খবর বাবা রাখতো। আমি বাবার উপর রাগ করে সেই যে বিয়ের পর চলে এসেছি আর একটা দিনের জন্যেও বাপের বাড়ি যাইনি। এমনকি একটা ফোন পর্যন্ত করিনি। ভেবেছিলাম যখন ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে তখন আত্মহত্যা করে নেবো।
একদিন বাবা মা দুজনেই এলো আমার শ্বশুরবাড়িতে, শ্বশুর মশাইয়ের ছুটির দিন দেখে। বাবা অনেক কথাবার্তা বলল কিন্তু অরিত্র  সম্পর্কে একটা শব্দও ব্যয় করলো না। শেষে বললো, "আমরা সৌরিজাকে নিতে এসেছি, যদি  অনুমতি দেন তাহলে নিয়ে যাবো। এই গর্ভাবস্থায় বাপের বাড়িতে থাকাই নিয়ম ও ভালো। আমার পেটে যখন তিনি মাসের বাচ্চা, তখন আমি বাপের বাড়ি চলে আসি। বাপের বাড়িতে কাজ কিছু করতে হয় না, কেবল ভালো মন্দ খাও আর ঘুমোও। এ ভাবে কতদিন ভালো লাগে! ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছেন আমার কোন সমস্যা নেই। আমার কোন খাবারে অরুচি নেই। আমার অলস জীবন যাপন দেখে বাবাই একদিন বললো, "সৌরিজা, গানটা আবার প্র্যাকটিস কর। আমাকে কতজন জিজ্ঞাসা করে, 'দাসবাবু আপনার মেয়েকে গানের জন্য পাওয়া যাবে?' তাই বলছি গানটা আবার শুরু কর। সময়ও কাটবে, হাত খরচও বেরিয়ে আসবে।"
            আমি আবার গান গাইতে শুরু করলাম। কিছু দিন পর আমার এই গান প্র্যাকটিস করার ব্যাপারটা রটে গেল। বা হয়তো বাবা রটিয়ে থাকতে পারে। এই রটনায় একদিন এক ভদ্রলোক এলেন আমার সাথে দেখা করতে। অফার দিলেন ওনাদের অর্কেস্ট্রা টিমে গান গাওয়ার জন্য। তার জন্য প্র্যাকটিসে যেতে হবে সপ্তাহে তিন চার দিন। প্র্যাকটিসে কোন টাকা পয়সা দেওয়া যাবে না, তবে স্টেজ শো হলে পার স্টেজ হাজার টাকা পাবো। টাকার দরকার থাকলে অ্যাডভান্স পাবো। রিহার্সালের জায়গায়টাও বেশী দূরে নয়, আমার বাপের বাড়ি থেকে হেঁটে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের পথ। বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করে পরের দিন জানিয়ে দিলাম আমি রাজি।
            কিছুদিন প্র্যাকটিসের পর এতো শো পেতে লাগলাম যে ধারণার বাইরে। সকালে প্র্যাকটিস, বিকেল শো। এক একদিন ডবল শো করতে হয়েছে আলাদা আলাদা স্টেজে। চিন্তা হচ্ছিল পেটের বাচ্চাটার কথা ভেবে। এত ধকল সহ্য করতে পারবে তো! নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতাম। ডাক্তারবাবু বলতেন, "সব ঠিক আছে। সাবধানে হাঁটাচলা করবে, যাতে পেটে ধাক্কা না লাগে।"
            আমি যে বেশ রোজগার করছি এবং গায়িকা হিসেবে বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে এই খবরটা অরিত্রর কানে পৌঁছেছে। একদিন দুপুর দুটো নাগাদ রিহার্সাল থেকে ফিরছি, বাড়িতে ঢুকেই দেখি অরিত্র বসে আছে। খিদায় তৃষ্ণায় নাজেহাল অবস্থা, তারপর বিকেলে শো আছে। নতুন নতুন গান তুলতে হচ্ছে, পেটে বাচ্চা- এত চাপে অস্থির অবস্থা। এই সময় অরিত্রকে দেখে গা পিত্তি জ্বলে গেল।


( ক্রমশ........)

          ~ হর্ষময় মণ্ডল
© Copyright Protected

Post a Comment

2 Comments

  1. Interesting .....Next part er jnyo opekhai roilam ...

    ReplyDelete
  2. পরের পার্টের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। বেশ ভালো।

    ReplyDelete
Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)

Close Menu