Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

দাঁড়াও পথিকবর | কলমে ~ দীপান্বিতা পান্ডে | নীরব আলো

"দাঁড়াও পথিকবর জন্ম যদি তব বঙ্গে তিষ্ট ক্ষণকাল এ সমাধিস্থল।" এই লাইনটি মাইকেল মধুসুদন দত্তের সমাধিফলকে লেখা আছে। দাঁড়াও পথিকবর এই থিয়েটারটি আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। কোন সালে দেখেছি বলতে পারবো না। তবে মনে গভীর দাগ কেটেছিল। যেটা এখনও জীবন্ত মনে হয়। তবে তখন বয়স ছিল দশ কি এগারো-বারো। ঠিক মনে পড়ে না তবে মাইকেল কে খুব মনে আছে৷ এই মাইকেল মধুসুদন দত্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উৎপল দত্ত৷ এখনও মনে হয় আমি তাঁকে জীবিত অবস্থায় দেখেছি৷ এই থিয়েটারটি দেখেছিলাম কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ নাথ কলেজের কোনো সভাগৃহে ঠিক মনে পড়েনা। আমি তখন খুবই ছোটো বোঝার অনুভূতি অতটা হয়নি। 

            ১৮২৪ সালে ২৫ শে জানুয়ারি যশোর জেলার কেশবপুরের সাগর দাঁড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন৷ পিতা বিশিষ্ট জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান৷ তিনি কায়স্থ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন৷ তিনি ছিলেন নির্ভিক উদারচেতা৷ ১৮৪৩ সালে ১৩ ই ফেব্রুয়ারি খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন৷ ব্যারিস্টারী পড়তে বিলাত গমণ করেন৷ ছোটো থেকেই সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগ ছিল বিশেষত ইংরেজী সাহিত্যে। তাঁর অসাধারণ পান্ডিত্য পাঠককুলকে চমকিত করে। তিনি টিমোথী পেন পোয়েম ছদ্ম নামে লিখতেন। তিনি প্রথম সনেট, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। 'মেঘনাদ বধ' কাব্য তাঁর কালজয়ী রচনা অমিত্রাক্ষর ছন্দে৷ এছাড়াও প্রহসন রচনায় বিশেষ পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন - বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা। এছাড়াও শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণ কুমারী, তিলোওমা সম্ভব, পদ্মাবতী তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি৷ তিনি দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন মাত্র এক রাতে ইংরেজীতে অনুবাদ করেন। একসঙ্গে চার জন অনুবাদকে চারটি বিষয়ে অবলীলায় সংলাপ বলে যেতেন যা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। ইংরেজী কাব্যগ্রন্থ 'The captive ladie' রচনা করেন। তার জীবনে বিলাসিতা ছিল উৎসবের মতো। এইজন্য তাকে চরম দরিদ্রতায় দিন যাপন করতে হয়েছিল যা খুবই বেদনা দায়ক। বিদ্যাসাগর এই কবি কে খুব সাহায্য করতেন এবং মনের কথা খুব বুঝতে পারতেন। তিনি শেষের দিকে পুরুলিয়ায় এসেছিলেন দুবার ৷ তার নামে কাশিপুরে একটি মহা বিদ্যালয় আছে। তিনি ইংরেজীকে স্বপ্ন করে রেখেছিলেন কিন্তু কোথাও কমতি থেকেই যায়। এই আক্ষেপ বঙ্গভাষা কবিতায় তুলে ধরেছেন মাতৃভাষার প্রতি উপেক্ষার অনুশোচনা। "হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি,

পরধন লোভে মত্ত , করিনু ভ্রমন পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচারি।"
তার স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর পরই কবি খুব ভেঙ্গে পড়েন কিছুদিন পর ২৯ শে জুন ১৮৭৩ সালে মাত্র ঊনপঞ্চাশ বছরে মৃত্যুবরণ করেন কলকাতার আলিপুর হাসপাতালে।

     ~  দীপান্বিতা পান্ডে
© Copyright Protected

Post a Comment

0 Comments

Close Menu