করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে
দিন যে দিনের বন্ধু"--- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
করুণাসাগর বিদ্যাসাগর বাঙালি জাতির কাছে একটি অতি পরিচিত প্রিয় মানুষের নাম। শাস্ত্রীয় প্রাচীরের অচলায়তনের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছিল সমগ্র সমাজের মধ্যে, তখন পৃথিবীর পশ্চিম দিগন্ত থেকে ছুটে এলো এক দুরন্ত পশ্চিমা ঝড়। সেই ঝড়ের আঘাতে আমাদের অন্ধকার অচলায়তনের রুদ্ধ দ্বার খুলে গেল।
যদি প্রশ্ন করো আমাদের লক্ষ্য কি? তবে শুনে রাখো একমাত্র করুণাসাগর এর বিজয় ছাড়া আমাদের আর কোনো লক্ষ্য নাই। পথ যতই দীর্ঘ কিংবা কঠিন হোক, বিজয় ছাড়া আমরা অন্য কিছু ভাবছি না|।
একেকটা অক্ষর একেকটা শব্দ, আর সেই শব্দ নিয়ে সাজানো বাক্যের ভেতরে থাকা জমাট আবেগ, এই উপাদানগুলোর পরিপূর্ণ মিছিল যখন ধ্বনিত হয় কোন এক বীরের কন্ঠে, তখন খুব বেশি সময় লাগে না পুরো পৃথিবী পাল্টে যেতে। সাধারণ কিছু শব্দ যেন ভিন্নমাত্রার অর্থ খুঁজে পায় মহান মনীষীর দীপ্ত চোখের প্রত্যয়ে। বেঁচে থাকে মানুষের জীবনে পৃথিবীর ইতিহাসে ধ্বংসের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত।
যখন পরাধীনতার অন্ধকারে আমাদের জাতীয় জনসমাজ অজগর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তখন সেই আত্মমগ্ন, আত্মভ্রষ্ট, সমাজকে রক্ষা করবার জন্য সর্বপ্রথম আত্মনিয়োগ করেন কর্মবীর রামমোহন রায়। তবু সমাজে জমেছিল বহু দুঃখ, বহু ক্রন্দন। সেই দুঃসহ দুঃখ ও অসহায় ক্রন্দন সহায়তার কোমল স্পর্শে মুছে দিয়ে যিনি সমাজের মুখে হাসি ফুটিয়ে ছিলেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়।
ভারতে রামমোহনের সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ এর ফলে, কৌলিন্য ও বহু বিবাহ প্রথার অনুগ্রহে সমাজে বিধবার সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে, ঘরে ঘরে বৈধব্যের কাতর ক্রন্দনে বিগলিত হল বিদ্যাসাগরের সংবেদনশিল কোমল হৃদয়। জননী ভগবতী দেবীর নির্দেশে সমাজে বিধবা বিবাহ প্রবর্তন এর জন্য কৃত সংকল্প হলেন তিনি। সুরধ্বনি যখন মর্তে অবতরণ করে, তখন কাহার সাধ্য সেই প্রবাহ রোধ করে? দুর্বার পদক্ষেপে অগ্রসর হয়ে চললেন এক পথিক, তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন আমাদের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়।
0 Comments