মেঘে মেঘে যায় গড়িয়ে বয়স কালের বেলা,
মনের কোণে যত্নে রাখা বেরঙিন ছেলেবেলা।
মায়ের কোলে জন্মেছিলাম আলো করে ঘর,
মা ছাড়া অখুশি সক্কলে, মা হয়েছিল পর।
উঠতে বসতে হাটতে চলতে শুনতাম আমি যে মেয়ে,
পান থেকে খসলে চুন বাবা, ঠাকুমা, পিসি আসত ধেয়ে।
খুব বেশী দূর করতে পারিনি পড়াশোনা- স্কুলে যাওয়া যে বারণ,
দেখতে দেখতে পৌঁছালাম বয়ঃসন্ধিকালে, মনখারাপ অকারণ।
একদিন দুপুরে চিলেকোঠার ঘরে লুকিয়ে পড়ছিলাম বই,
ধরা পড়ে যাই ঠাকুমার হাতে, বাঁধল হই চই।
শাস্তি পেলাম, খাওয়া বন্ধ সারাদিন, অন্ধকার ঘর,
মা ছোট্ট ভাইকে নিয়ে নাজেহাল, আমার আসল প্রবল জ্বর।
কেঁদে কেঁদে আমার এই দশা, তবু হয়নি কারো মায়া,
হুকুম জারি করল ঠাকুমা, কেউ মাড়াবে না আমার ছায়া।
কেটে গেল দুটো দিন, কমল আমার জ্বর,
মা লুকিয়ে আসত গভীর রাতে, সেবা করত রাত ভোর।
এরকমই এক সকালে খবর এলো, ঠিক হয়েছে আমার বিয়ে,
হবু বর বয়সে আমার বাবার বয়সী, আমায় উদ্ধার করবে প্রচুর পণ নিয়ে।
সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে এলো মা আমার কাছে,
বুকে টেনে নিল আমায় বলল,"পালাই চ", কিছু গয়না আছে আমার কাছে।
সেদিন রাতেই মা মেয়েতে হলাম গৃহত্যাগী,
জানি, মানবে না এ সমাজ, আমরা হবো পাপের ভাগী।
তবুও আমরা থামিনি সেদিন, খুঁজেছিলাম নিজেদের পরিচয়,
ফলস্বরূপ আজ আমি আশ্রয় বহু গৃহত্যাগী মানুষের, পাশে আমার মা, আমরা জিতব নিশ্চয়ই।
~ দেবারতি গুহ সামন্ত
© Copyright Protected
0 Comments