Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

ফাদার্স ডে | ঐন্দ্রিলা বন্দ্যোপাধ্যায় | ছোটগল্প | পিতৃ দিবস

ফাদার্স ডে
ঐন্দ্রিলা বন্দ্যোপাধ্যায়

ড়ন্ত বিকেলের সূর্যটা পশ্চিমের আকাশে ঢলতে শুরু করলেই গাড়ির উইন্ডশিল্ডের উপর দিয়ে রোদটা সরাসরি চোখে এসে লাগে। সদ্য ক্যাটারাক্ট অপারেশন করিয়ে নতুন লেন্স বসানোয় এখন সবকিছুই আগের থেকে অনেক বেশি উজ্জ্বল লাগে শশাঙ্কর।এই অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভ করতে একটু অসুবিধেই হয়।তাই আজ মাসখানেক হলো একটা নতুন ড্রাইভার রেখেছে সে। রোদ্দুরটাতে বেশ কষ্টই হচ্ছে। প্রতুলকে বলে মাঝ রাস্তাতেই গাড়িটা দাঁড় করিয়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসলো শশাঙ্ক।

        অভ্যাসবশত মোবাইলটা হাতে নিয়ে এটা সেটা করতেই ফেসবুকে পোস্ট হওয়া অজস্র ছবি চোখের সামনে চলে এলো এক লহমায়- যেন চলন্ত অ্যালবাম। গতকাল সান্ধ্য এবং নৈশভোজনের পার্টিতে তোলা সব ছবি এক এক করে পোস্ট করেছে তার চারপাশের যত সো কলড আত্মীয়রা। আধুনিক প্রজন্মের বিশ্ব পিতৃদিবস পালনের এত উপাচার দেখে শশাঙ্ক বাকরহিত হয়ে পড়ে।

        তার মনে পড়ে না কোনদিন বাবাকে কোন বড় হোটেলে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতে পেরেছে সে। আজন্মকাল সহজ সরল জীবন যাপনেই অভ্যস্ত ছিলেন বাবা।তাঁর আয়ের উদ্বৃত্ত চিরকালই বিলিয়ে দিয়েছেন জনহিত কর্মে। অন্তর থেকে তাঁকেই চিরদিন জীবন্ত ঈশ্বর মেনে এসেছেন ঠিক ততদিন পর্যন্তই যতদিন না দিদির বিয়ে হয়েছে।

        মেয়ের বিয়ে দিয়ে সেই বাবাই এক অচেনা রূপে ধরা দিল তার কাছে। ছেলে মেয়ের ভেতর কম বেশি পক্ষপাতিত্ব বরাবরই ছিল যদিও তবে তা আরো বেশি প্রকট হয়ে উঠল যেদিন দিদিকে সরাসরি বললেন "বিয়ে হয়ে গেছে, এখন তুই ওই বাড়ির আমাদের ইউনিট এখন সম্পূর্ণ আলাদা"। অভিমানী দিদি সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলে ফেলে, "একি বললে বাবা, সবার আগে আমি তো তোমার মেয়ে!" সেদিনের পর থেকে দিদি আর এ বাড়িমুখো হয়নি। বলা যায় সেই কারণেই অতি তৎপরতায় জামাইবাবুর চাকরি জুটিয়ে এখন পাকাপাকিভাবে সে কানাডাবাসী। সেদিন শশাঙ্ক প্রতিজ্ঞা করে বাবাকে দেখিয়ে দেবে তার যদি কন্যাসন্তান হয় তাকে আদর যত্ন এবং সম্মানের সঙ্গে কিভাবে মানুষ করতে হয়। কিন্তু বিধাতার বিচার বোঝা দুষ্কর। ললাটের লিখনে সত্য প্রয়াতা স্ত্রী তাকে সারাজীবনই সন্তানলাভে বঞ্চিত করেছে।

        প্রতুলকে মাস মাইনের চুক্তিতে ড্রাইভার হিসেবে রাখলেও শশাঙ্ক জানে সে মাঝে মধ্যেই তার নজর এড়িয়ে বাইরের ডিউটি করে। শশাঙ্ক বুঝেও কিছু বলে না। অভাবের সংসার- বাড়তি রোজগার না হলে চলেই বা কি করে! বাড়িতে ফিরে গাড়ি গ্যারেজ করে ফিরে যেতেই প্রতুলকে ডেকে সে টাকার খামটা হাতে দিলো। প্রতুল একটু অবাক হয়েই বলে, "স্যার মাস শেষ হয়েছে তো এখনো দেরী আছে আপনি এত আগেই মাইনেটা দিলেন?"শশাঙ্ক নিশ্চু। রাসভারী শশাঙ্কের মুখের ওপর প্রতুল কিছু বলতেই সংকোচ করে, তবু সাহস করে বলেই ফেলল- "জানেন স্যার এই জামাটা গতকাল মেয়ে আমায় দিয়েছে, ফাদার্স ডে ছিল তো তাই। ভালোই হয়েছে স্যার, আপনি আজ মাইনেটা দিলেন মেয়েটা অনেকদিন ধরে পিৎজা খাবে বলছিল, আজ যাবার সময় কিনে নিয়ে যাব"। শশাঙ্ক মুচকি হাসে।













Post a Comment

1 Comments

Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)

Close Menu