হাত ঘড়িটা
অধীর কুমার রায়
বাবা চলে গেছেন।
এই তো সেদিন,প্রভাতি আলোতে
হৃদয়ে স্বপ্নের বীজ বুনে
আমি কলেজের বেঞ্চিতে।
হাতে ছিল জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ
দূরবীণে দেখে ছিলাম সাহিত্যের পথ।
বাবা কিনে দিলেন সোনার জল করা
'হাত ঘড়িটা'।
সঙ্গে কে. সি. পালের ছাতা।
যতদূর মনে পড়ে বাবার দেওয়া
-এইতো আমার উপহার।
নতুন কলেজের হাওয়া লেগেছিল পালে,
তাই ইচ্ছের ডিঙি তরতরিয়ে চললো
দারিদ্রের উজান বেয়ে।
কত অনুযোগ, আমার সাইকেল চাই,চাই
জিন্সের প্যান্ট, এ বই সে বই আরও কত কি
বাবা বললেন " খোকা তোকে কিছুই দিতে পারলাম না।আজ আমার সামর্থ নেই।
মনে দুঃখ থেকে গেল।"
সংসার সমুদ্র মন্থন করা অপরাহ্নে
নীলকন্ঠ পিতার শেষ কথাগুলো
মেঘ হয়ে ধাক্কা খেল পাহাড়ে।
চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল বৃষ্টির ধারা।
বাবার দেওয়া ছাতাটা জানতেই পারলো না এই বৃষ্টির জলের স্বাদ।
মেঘের জল বিন্দু বিন্দু করে সাগর হলো
ভাঙা ডিঙি,ছেড়া পালেই এগোতে লাগলো।
আজ বড় হয়েছি,স্কুলে বাংলা পড়াই
যখন প্রাপ্তির ঝুলিটা খুলি
দেখি আমার ঝুলি আর্শিবাদে পূর্ণ।
বাবার অনুপ্রেরণা, ইচ্ছেশক্তি
আজও ধ্রুবতারা হয়ে পথ দেখায়,
কান্ডারী হয়ে তরী চালায় তমসাচ্ছন্ন
কূলকিনারাহীন সমুদ্রের বুকে।
আর বাবার দেওয়া সেই হাত ঘড়িটা
টিকটিক করে বলে -
"খোকা ভয় পেওনা আমি তোমার সঙ্গেই আছি।"
দু চোখে গড়িয়ে পড়ে নোনা জলের সাগর।
0 Comments