Ad Code

.
.
1 / 6
2 / 6
3 / 6
4 / 6
5 / 6
6 / 6

আক্ষেপ | ড. সঞ্জীব রায় | ব্যক্তিগত | পিতৃ দিবস

আক্ষেপ
ড. সঞ্জীব রায়

বাবা আমাকে কতটা স্নেহ করতেন, সেটা বাবার বাইরেটা দেখে বোঝার উপায় ছিল না। আমরা ভাইবোনেরা বাবাকে কঠিন, আবেগহীন মানুষ বলেই মনে করতাম। বলতে দ্বিধা নেই, তাঁকে খানিক এড়িয়েই চলতাম। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পরেও তাঁর চোখে এক ফোঁটা জল দেখিনি। কিন্তু ঠাকুমা জীবিত থাকাকালীন তাঁর সেবা যত্নের কোন ত্রুটি তিনি রাখেননি। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পরে ব্রাহ্মণ সন্তান হয়েও তিনি তাঁর মায়ের পারলৌকিক ক্রিয়া করেননি। কাকা পিসিদের অনুরোধ সত্বেও তাঁর এহেনও কাজ আমাদের বিরক্তির উদ্রেক করত।
        আমরা চার ভাইবোন। আমি ছোট। নিজেই সহকর্মীকে বিবাহ করব বলে মনস্থির করি। ভয় ছিল বাবা এই অসবর্ণ বিবাহ মানবেন না। আশ্চর্যজনকভাবে তিনি কোন প্রতিবাদ না করে বলেছিলেন, "সাবালক হয়েছে সে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখেছে।" হয়তো একটা অভিমান তাঁর থাকলেও থাকতে পারে যার জন্য তিনি পাত্র অম্লানের ব্যাপারে কিছু জানতে চান নি।
        ছোট্টবেলা থেকে বেশ বড় বেলা অবধি আমার বাজে একটা নেশা ছিল পুতুলখেলা। আমি যথেষ্ট আধুনিক হলো এই ব্যাপারে ছিলাম খানিক‌ সেকেলে। আমার সব পুতুলগুলি কিন্তু বাবারই কিনে দেওয়া। তবে হ্যাঁ, তিনি কখনোই আমার হাতে তা দেননি। মার হাত দিয়ে আমায় দিতেন।
        বিয়ে করে চলে যাবার সময়ও তাঁকে চোখের জল ফেলতে দেখিনি। মাকে বলেছিলাম পুতুলের বাক্সটা নিয়ে যাব। বাবা শুনে বলেছিলেন, "জীবনটা পুতুল খেলা নয়।" দ্বিতীয়বার কিছু বলার সাহস হয়নি। মা গত হওয়ার পরে বাবা খুব একটা ঘর থেকে বেরোতেন না। বলা বাহুল্য তিনি মায়ের কাজও করেননি। বাবার ঘরে একটা বড় সাইজের সিন্দুক ছিল। সেটাতে কেউ হাত দিতে সাহস করত না।
        বাবাও হঠাৎ চলে গেলেন। আমরা ভাইবোনেরা জড়ো হয়েছি, সিন্দুক খোলা হবে। না জানি তাতে কি রত্ন মণি-মাণিক্য আছে! খোলার পরে প্রথমে এলো মা ঠাকুমাকে লেখা বাবার কিছু চিঠি। তারপর নীল ডায়েরি; যেখানে মায়ের জন্য বাবার স্মৃতিচারণ। তারপরেরটা দেখে চমকে উঠলাম। যত্ন করে রাখা আমার ছেলেবেলার সেই পুতুলের বাক্স। তার ভেতরে একটা চিরকুটে লেখা, "আমি যখন থাকবো না তুমি বাক্সটা নিয়ে যেও। বিয়ের পর এটা নিয়ে গেলে আমি বড্ড একা হয়ে যেতাম। মাত্রাদিক রূঢ় হওয়ার জন্য দুঃখিত।"
        আজও ভাবি, বাবাকে না চিনে জীবনে এত বড় ভুল করলাম কী করে?










Post a Comment

1 Comments

  1. বাবাদের স্নেহের তুলনা নেই। কোন পথে যে তার প্রকাশ সময় থাকতে বোঝা দায়। খুব ভালো লাগলো। মনটা বেদনার্ত হয়ে গেলো🙏

    ReplyDelete
Emoji
(y)
:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
x-)
(k)

Close Menu