পৃথিবীর ভবিষ্যত
সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়
বুকের উপর কে যেন ভারী পাথর চাপিয়ে রেখেছে।কিছুতেই নি:শ্বাস নিতে পারছেন না সুজয় বাবু।চোখ দুটো ঠেলে বেরিয়ে আসছে।জল ছাড়া মাছের মতো মুখটা খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে।উফফ!একটু খোলা বাতাস __-একটু অক্সিজেন,...
না: এই ইঁট,কাঠ কংক্রিটের জঙ্গলে কটা ই বা মহীরুহ আছে যারা পারবে সুজয় বাবুর মতো সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে?
আর মানুষ ই বা কজন আছে সবই তো যন্ত্র। যাদের অক্সিজেন, খাবার কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই।সেই যে ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল মৃত্যু মিছিল।তারপর প্রায় ৫ দশক ধরে চলেছে মানব সমাজের পতন,আর নির্বিচারে সবুজ হত্যা।আরশোলা, গিরগিটি আর দু তিন রকম পোকা ছাড়া বিশেষ কোনো প্রাণী এই পৃথিবী তে অবশিষ্ট নেই। এই ২০৯২ এ পুরো পৃথিবীর নক্সা ই বদলে গেছে।এখন শুধু তারাই ভালোভাবে বেঁচে আছে যারা নিজেদের পুরো শরীর অক্সিজেন ক্যপশুলের আস্তরন দিয়ে মুড়ে রেখেছে।যার খরচ বিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার। তাই হাতে গোনা ক'জন বিলিওনিয়ার ছাড়া বাকি সবাই আমাজনের রিফিউজি ক্যাম্পে আছে। কিন্তু ওই একরত্তি জঙ্গল কি পারে কোটি কোটি মানুষের অক্সিজেন যোগাতে?
সুজয় বাবু ছোটো বেলায় এশিয়া নামের একটি মহাদেশের, ইন্ডিয়া য় থাকতেন।অনাবিল আনন্দে কেটেছে সেই দিনগুলো। আমগাছ, জামরুল গাছের ছায়া ঘেরা ছোট্ট বাড়িতে।
এখন সেই দেশ তো দূরের কথা মহাদেশের ই কোন অস্ত্বিত্ব নেই। শুধু বলিভিয়ার একটি শহরে অক্সিজেন ক্যাপসুল এ বন্দী সেই বিলিওনিয়ার রা বসবাস করেন।তাঁদের হাতে ই এই পৃথিবীর ভবিষ্যত।আর সুজয় বাবুদের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু শুধু সময়ের অপেক্ষা।
চোখ বন্ধ হয়ে আসছে সুজয় বাবুর......দূর থেকে অনুরাগ ডাকছে, "আমায় ধরতে পারে না", সারা বাগান জুড়ে কোকিলের ডাক আর বাচ্চাদের হাসি শোনা যাচ্ছে, কৃশানু আমগাছের উপর থেকে কাঁচা আম ছুড়ছে, রাশি সব আমগুলো নিয়ে পালাল..." দাঁড়া দাঁড়া আমি হাঁপিয়ে গেছি" সুজয় বাবু কিছুতেই ধরতে পারছেন না...অনুরাগ কে,রাশি কে.... তাঁর ছেলেবেলা কে।
0 Comments