অসহায় গরীব মফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে সজীব দুজনের
দুবেলা দুমুঠো ভাত ঠিক মত খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো ।
তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপের কারণে ১৫ বছর
বয়সেই সজীবকে শহরে যেতে হল কাজের সন্ধানে কিছু টাকা উপার্জনের আশায় ।
শহরে যাওয়ার আগে মফিজ উদ্দিন সজীব কে একটা পুরোনো সেকেন্ড হ্যান্ড একটা মোবাইল কিনে দিল আর
বললো আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস । তিনি একটি কারখানাই দেখাশোনার কাজ করতেন ।কারখানার মালিকের মোবাইল নম্বরটা সজীব কে দিয়ে বললো এই নম্বরে কল করবি এটা আমার মালিকের নম্বর।
কিছু দিন পর,
সজীব শহর থেকে বাবাকে ফোনে করবে বলে মোবাইল
রিচার্জ করেন ১০ টাকা তাতে সে পেলো ৬-৭ টাকা মত । কিন্তু
পাশের একজন ভদ্র মানুষ রিচার্জ করলো ১০০ টাকা তাতে সে পুরো ১০০ টাকায় পেলো । সামনের দেওয়ালে একটা নোটিশ বোর্ডে সজীবের চোখ পড়লো ওখানে লিখা আছে -
100=100
200=200
300=300 টাকা
এগুলো সবই ধনীদের জন্য , মধ্যবিত্ত পরিবারের কোনো মানুষ এত টাকা রিচার্জ করতে পারবে না । তাই অবাক হয়ে দেখলো তবে কিছু বলার সাহস করতে পারলনা, সে নির্বাক হয়ে সেখান থেকে চলে গেল ।
সপ্তাহ খানেক বাদ ,
একদিন সজীব বাজারে যায় আপেল কেনার জন্য ,তার আপেল খাওয়ার খুব ইচ্ছে করেছে । তাই সাথে ৫০ টাকা নিয়ে
সে বাজারে গেল ।
গিয়ে আপেল ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো - আপেল কত টাকা পোয়া ? উত্তরে আপেল ওয়ালা বললো - ১ কেজি ১০০ টাকা / ২৫০ গ্রাম ৩০ টাকা ।
সজীব অবাক হয়ে বললো ২৫০ গ্রামের দাম তো ২৫ টাকা লাগে তাহলে আপনি ৫ টাকা বেশি চায়ছে ন কেন ?
দোকান দার একটু বিরক্ত হয়ে বললো নিলে নাও আর না নিলে যাও । সজীবকে একটু লজ্জা লাগছিল যে সে ৫ টাকার জন্য ঝামেলা করবে । তাই সে বাধ্য হয়ে নিতে হলো ৩০ টাকা দিয়েই ২৫০ গ্রাম নিতে হল যেহেতু তার ১ কেজি নেওয়ার সামর্থ্য নেই।
২ মাস পর সজীব বাড়ি ফিরবে ইচ্ছে করলো। মফিজ উদ্দিনকে কে ফোন করে বললো -
বাবা আমি বাড়ি আসছি আর তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবিও কিনে আনবো , এখানে খুব সুন্দর সুন্দর সুতির পাঞ্জাবি পাওয়া যায় যেটা পরে কাজ করতে তোমার অসুবিধা হবে না ।
মফিজ উদ্দিন তো তার ছেলের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে আর একটু কথা বললেই যেন সে আর কান্না রুখে রাখতে পারবে না । তখনই সজীব বললো বাবা এখন রাখি মোবাইল এ বেশি টাকা নেই , রাস্তায় কথা বলতে বলতে আসবো ।
শহর থেকে বাড়ি ফেরার সময়,
স্টেশনের সামনে একটা লোক পাঞ্জাবি , গেঞ্জি এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের জামা কাপড় বিক্রি করছে । সজীব বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনবে বলেছে তাই সে ওখানে গেল আর বাবার জন্য সাদা রঙের একটা ফুলহাতা সুতির পাঞ্জাবি পছন্দ করলো কিন্তু ওখানেও একই পরিস্থিতির মধ্যে তাকে পরতে হয় । দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা বলে একটা নিলে - ৪০০ টাকা আর দুটো নিলে ৬৫০ টাকা । সজীব এই প্রথম শহর থেকে বাড়ি ফিরছে তাই সে বাবার জন্য পাঞ্জাবিটা কিনবে তাতে ওর দাম যতই হোক, সজীবের মনে মনে ইচ্ছে যে সে তার প্রথম রোজগার দিয়ে বাবাকে কিছু উপহার দেবে । তাই সে নিরুপায়ে ৪০০ টাকা দিয়েই পাঞ্জাবিটা কিনে নিলো ।
বাড়ি ফিরে সজীব বাবাকে সব কথা খুলে বলে ।
মফিজউদ্দিন দুঃখের হাসি মুখে নিয়ে বললো
বাবারে এই দেশে এমনটাই হয়।
" সমাজে মাথা উঁচু করে
চলা হবে না কভু মোদের ।
যুগের পর যুগ পেরিয়ে দেখি
দুর্ভিক্ষ ফিরে আসছে ফের "
∆ মধ্যবিত্ত পরিবারের একজনের রোজগারে খেতে পড়তেই শেষ হয়ে যায় । তারা এক্সট্রা কোনোদিন চোখেই দেখতে পায় না। তারা যা ইনকাম করে দিনান্তে শেষ হয়ে যায় আর ধনীদের
ইনকামের টাকায় ডবল ডবল নিলেও অর্ধেক শেষ হবে না । তবুও ধনীরায় সব জাইগায় ছার আর অফার পায় কারণ তারা বেশি কিনে ।
গরীবের রক্তকে এমন করে চুষে খেয়ে নিচ্ছে যে
তারা কখনো সুস্থ্য মেজাজে , সুস্থ্য মনে , সুস্থ্য হয়ে জীবন
যাপন করতে পারে না ।
~ আমিরুল ইসলাম
© Copyright Protected
0 Comments