Ad Code

.
.
1 / 8
2 / 8
3 / 8
4 / 8
5 / 8
6 / 8
7 / 8
8 / 8

কর্মযোগী বিধানচন্দ্র রায় | কলমে ~ অনাদি মুখার্জি | নীরব আলো


ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়, তিনি শুধু পশ্চিমবাংলার রূপাকার ছিলেন না, তিনি একজন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ও গরিবের বন্ধু ছিলেন। তাঁর কর্মজীবন নানা বৈচিত্র্য ভরা। অদম্য ইচ্ছা ও নিষ্ঠা একজন মানুষের জীবনকে কতটা সার্থক করে তুলতে পারে তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়।

            ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে বলতে গেলে অনেক বড়ো হয়ে যাবে। তিনি বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেছেন‌। তাঁর সাথে গান্ধীজি, নেতাজি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোন লোকের খুব ভালো যোগাযোগ ছিল।

            একবার গান্ধিজী জেলে বন্দি অবস্থায় অনশনে রত ছিলেন। সেই সময় তাঁর শরীর এতটা খারাপ হয়ে ছিল যে সবাই ভেবেছিল গান্ধীজি মারা যাবেন। সেই সময় সরকারি বিশেষজ্ঞ গান্ধিজীকে গ্লুকোজ ইনজেকশন দিতে বলেন। সেইখানে বিধান চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি সকলকে নিরস্ত করে গান্ধিজীকে মুসম্বি লেবুর রস খাইয়ে তাঁর অনশন ভাঙেন এবং গান্ধিজীকে সুস্থ করে তোলেন। এর কিছুদিন পর আবার ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের সাথে দেখা হয় গান্ধিজীর। তখন গান্ধিজী বলেন ডাক্তার তোমার চিকিৎসা আমি আর নেব না ! ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় বললেন আমার অপরাধ কী? তখন গান্ধিজী বললেন যেখানে দেশের ৪০ কোটি মানুষের চিকিৎসা ঠিক মতোন দিতে পারছি না, তখন তোমার চিকিৎসা আমি নেব কেমন করে? বিধান চন্দ্র রায় তখন বললেন তার ভার আমাকে দেন, আমি করবো সেই ৪০ কোটি মানুষের চিকিৎসা। সেই ৪০ কোটি মানুষের মধ্যেই আপনিও আছেন, তাই আপনার চিকিৎসা আমি করবো।

            বিধান চন্দ্র রায়ের চিকিৎসার উপর খুব ভরসা পেতেন গান্ধিজী। শুধু গান্ধিজী কেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিধান চন্দ্র রায়ের চিকিৎসার উপর খুবই আস্থা ছিলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু হলে আগে বিধান চন্দ্র রায়ের ডাক পড়তো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ চিকিৎসা যাঁরা করেন তাঁদের মধ্যে অন‍্যতম ছিলেন ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়। এইসব তথ্য থেকে বোঝা যায় ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের চিকিৎসার উপর কতটা বিশ্বাস ছিল। তিনি যে একজন সেরা চিকিৎসক ছিলেন, তাও বোঝা যায়।

            তিনি শুধু চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এই পশ্চিম বাংলার রূপকার। রাজনীতি থেকে তিনি খুব দূরে থাকতেন। স‍্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ঠেলে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। সেখানে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের সাথে পরিচয় হয়। নেতাজীর প্রস্তাবে ১৯৩১ সালে কলকাতার মেয়র হন বিধান চন্দ্র। এই সময় তিনি অনেক কাজ করেন। পরে তিনি লাহোর কংগ্রেসের যোগদান করেন। ১৯৪২ সালে সামরিক বিভাগের জন্য চিকিৎসক বাহিনী গঠনে সরকারকে সাহায্য করেন। ভারত যেদিন স্বাধীন হয় তখন বিধান চন্দ্র রায়কে উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডের রাজ‍্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সেই সময় পশ্চিম বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন ডাক্তার প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ। কিন্তু তাঁর সাথে প্রদেশ কংগ্রেসের বিরোধ দেখা দিলে প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ ইস্তফা দেন। সেই সময়  ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী পদ গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর মন্ত্রিসভা গঠন করেন নেতাজির জন্ম দিনে ২৩ শে জানুয়ারি। ওইদিন তিনি ভাষণ দেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে। ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬২ সালের ১লা জুলাই পর্যন্ত। ১লা জুলাই তিনি মারা যান। মৃত্যুর দিন অবধি তিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

            বিধান চন্দ্র রায় মুখমন্ত্রী হবার পরেও চিকিৎসা করা ছাড়েননি। সকালে মহাকরণে যাবার আগে তিনি রোগী দেখে যেতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল বলে ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় মুখ‍্যমন্ত্রী হয়ে শান্তিনিকেতনকে সাহায্য করার জন্য সবসময় সচেষ্টা থাকতেন। তাঁর প্রচেষ্টাতেই শেষ পর্যন্ত কবির জন্মস্থানে রবীন্দ্রভারতি বিশ্ববিদ‍্যালয় স্থাপন করেন। তিনি প্রথম সরকারি বাস চালাবার ব্যাবস্থা করেন। তিনিই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কেন্দ্রকে দিয়ে ময়ূরাক্ষী প্রকল্প চালু করেছেন। তিনি গড়েছেন কল‍্যণী, দুর্গাপুর। গঙ্গাকে পলি মুক্ত করে নতুন আবাসান গড়েছেন সল্টলেক সিটি, হলদিয়া প্রকল্প ইত্যাদি। সেই সময় ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের মতোন সফল কান্ডারি আর কেউ ছিলেন না।

প্রকৃতই বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন একজন কর্মবীর। চিকিৎসক হিসেবে তিনি ছিলেন সফল, এর পাশাপাশি তিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ‍্যোক্তা ছিলেন।

কর্ম জীবন এবং ফলের প্রত‍্যাশা না করে কাজ করে যাওয়া তাঁর ছিল ধর্ম। এই সত‍্যকে তিনি তাঁর জীবনের সত‍্য করে তুলেছিল। এমন কর্মী দেশকে দেয় এগিয়ে চলার শক্তি। তাই তিনি শুধু পশ্চিমবাংলার রূপকারই নন, তিনি হলেন কর্মবীর ও কর্মযোগী বিধান চন্দ্র রায়।

    ~  অনাদি মুখার্জি
© Copyright Protected

Post a Comment

0 Comments

Close Menu