ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে, বিশেষত, শিক্ষাসংস্কারের ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের বিদ্যাসাগর। অশিক্ষা-কুশিক্ষার অন্ধকার দূরীভূত করে ভারতবাসীকে জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করতে বিদ্যাসাগর মহাশয় সনাতন শিক্ষার সাথে পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। কেবলমাত্র নারীশিক্ষার জন্য তাঁর বিশেষ অবদান এখানে তুলে ধরা হল।
শিক্ষা ছাড়া নারীমুক্তি অসম্ভব- এ বাস্তব সত্য বিদ্যাসাগর মহাশয় অনুভব করেছিলেন। তাঁর অনুভবটা যদিও শুধু মস্তিষ্কে নয়, হৃদয়ে। নারীশিক্ষার পথিকৃৎ হিসাবে বিদ্যাসাগর জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের সহায়তা নিয়ে ১৮৪৯ সালে ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল (আজকের বেথুন স্কুল) গঠন করেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রচেষ্টায় বাংলার বিভিন্ন জেলায় সে সময়ে মোট ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন বিদ্যাসাগর। তথ্য অনুসারে হুগলিতে ২০টি, বর্ধমানে ১১টি, মেদিনীপুরে ৩টি, নদীয়ায় ১টি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এগুলিতে প্রায় ১৩০০ ছাত্রী লেখাপড়ার সুযোগ লাভ করেছিল।
নারীজাতিকে মায়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠান করে যে সকল দৃষ্টান্তগুলি বিদ্যাসাগর মহাশয় স্থাপন করেছিলেন, তার অনেকগুলি গল্প আমরা জানি। আসলে মানুষটা আমার মতে প্রকৃত 'মাতৃপূজক' ছিলেন; সমাজের তথাকথিত 'তালেবর' কর্তৃক নারীজাতির অপমানের বিরুদ্ধে বারবার তিনি গর্জে উঠেছেন। নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য যে আগে বাল্যবিবাহ বন্ধের প্রয়োজন তা বুঝেই তিনি 'বাল্যবিবাহের দোষ' নামক প্রবন্ধ রচনা করেন 'সর্বশুভঙ্করী পত্রিকা'য়। এর জন্য কুলীনদের বহুবিবাহ বন্ধেরও প্রচেষ্টা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বিধবাবিবাহ আইন পাশ জাতি কি কোনোওদিন বিস্মৃত হবে? "যেখানে নারীরা সম্মানিত হয়, সেখানে ভগবান বাস করে"- এ কথা তাঁর ন্যায় মহানুভবই বলতে পারেন।
0 Comments