শিবগঞ্জের বারোয়ারী দুর্গাপূজার নাম-ডাক অনেক দূর পর্যন্ত সবাই জানে। আশেপাশের চার-পাঁচ টা গ্রামের লোকও আসে এই পুজোয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী ভীড় লেগেই থাকে শিবগঞ্জের বড় মাঠটায়। পুরো মাঠ জুড়ে না হলেও প্রায় মাঠের অর্ধেকটা জুড়ে বসা মেলাটাই সবার প্রধান আকর্ষণ৷ কি নেই সেখানে? জিলিপির দোকান থেকে শুরু করে মাটির হাড়ি কলসি পর্যন্ত, খেলনা ছোট্ট ব্যাটারির এরোপ্লেন থেকে জাদুগরের ম্যাজিক পর্যন্ত। যেখানে বাচ্চাদের একট দোলনা বসেছে তার পাশে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে মনা দেখছে ভিখারিটাকে।
হ্যাঁ ভিখারিই বটে। ছেঁড়া জামাকাপড়, চুলে অনেক বছর চিরুনি বা তেল কিছুই পড়েনি মনে হয়। এক হাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে অন্য হাতে মাঠের মেলার অন্য লোকেদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে সে। মনা তার বাবার সাথে মেলায় এসেছে।
শিবগঞ্জের পাশের গ্রামের নাম শীতলগঞ্জ। সেই গ্রামেই মনার বাড়ি। তার বাড়িতে বাবা, মা আর ছোট্ট বোন নীলা আছে। আর আছে তাদের ছোট্ট ছাগল মুন্নি। হাতে টান পড়তে তাকাল মনা। বাবা ডাকছেন তাকে "কি রে হাঁ করে ওদিকে কি দেখছিস। এদিকে দেখ।"
মনা তাকিয়ে দেখল, একজন রঙ চঙে পোশাক পড়ে ম্যাজিক দেখাচ্ছে। তার কালো টুপির মধ্যে থেকে প্রথমে বেরিয়ে এল খরগোশ, তারপর লাল ফিতে। শেষে একটা পায়রা উড়ে গেল ফরফর করে। মনা হাততালি দিল।
মেলায় ঘুরে যথারীতি বাড়ি ফিরল মনা। বোনকে অনেক গল্প শোনাল তারপর বলল, "জানিস আজ একটা ম্যাজিক দেখেছি, একটা ভিখারি ঘুরছিল মেলায় সে কারুর সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল না। কেউ তাকে দেখতেও পাচ্ছিল না। কিন্তু কি যেন খুঁজছিল সে।" মনার বোন অনেক ছোট সে শুধু হাসে। এরপর মনা নিজের মনে মনেই বলল, "কিন্তু লোকটা মা দুর্গার সামনে গিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেল কেন? আর দেখতে পেলাম ই না..."
~ সুকান্ত দাস
© Copyright Protected
0 Comments